যশোরের কেশবপুরের পাজিয়া ইউনিয়নের গড়ভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ের ভবনটি নির্মাণের ২৮ বছর পার হতে না হতেই ব্যবহার অনুপযোগী ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয়ের গ্রেড ভিম থেকে শুরু করে দেয়াল ও পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনেই চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। 

বিদ্যালয়টির নতুন ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। তবে কাগজে কলমে আবেদনের বিষয়টি এখনো জানেন না বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

সরেজমিনে গড়ভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ওই ভবনে ঝুঁকি নিয়ে নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম চলছে। ভবনের বারান্দার অংশে ছয়টি পিলারে দেখা দিয়েছে ফাটল। ইতোমধ্যেই দুটি পিলারের সিমেন্ট খসে বের হয়ে গেছে মরিচা ধরা রড। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের ভেতর ছাদে এবং গ্রেড ভিমে দেখা দিয়েছে ফাটল। কখনো চলটা ধরে খসে খসে পড়ছে ছাদের অংশ। দেয়াল খসে বালু পড়ায় দেয়ালে স্টিকারসহ বিভিন্ন কাগজ আঠা দিয়ে লাগিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়াও প্রায় এক ফুটের মতো দেবে গেছে বিদ্যালয়ের শৌচাগার। 

সম্প্রতি বিদ্যালয়ের ছাদ থেকে সিলিং ফ্যানের হুক খসে সহকারী শিক্ষক জিয়াউর রহমানসহ আরও দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফলে বিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতিও দিন দিন কমে আসছে। যে কোনো সময়ে এ ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষকরা। 

গড়ভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশুতোষ নন্দি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনটি ১৯৯৩-৯৪ সালে নির্মাণ করা। বর্তমানে এই ভবনে নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ভবনটিতে গত চার-পাঁচ বছর ধরে ভাঙন ও ফাটল দেখা দিয়েছে। এই ভবনে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যে কোনো সময় এ ভবন ধসে পড়তে পারে। 

তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নেওয়ার সময় এক সহকারী শিক্ষকের মাথায় ছাদ থেকে সিলিং ফ্যানের হুক খসে পড়ে। এতে শিক্ষকসহ দুই ছাত্র আহত হয়।  বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। নতুন ভবনের জন্য আবেদন করা হয়েছে বলে শিক্ষা কর্মকর্তা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তবে আবেদনের বিষয়টি কাগজে কলমে এখনো পর্যন্ত আমার জানা নেই। 

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জিয়াউর রহমান বলেন, কিছু দিন আগে আমার মাথায় সিলিং ফ্যান ছাদ থেকে খসে পড়েছে। এ ভবনে ছোট শিশুরা খুবই ঝুঁকিপূর্ণভাবে পড়াশোনা করছে। যত দ্রুত সম্ভব নতুন ভবনের ব্যবস্থা করা উচিত। অন্যথায় যে কোনো সময় এর থেকে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। 

ওই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সাকিবুল হাসান বলে, ক্লাস চলাকালে আমি স্যারের কাছে খাতা দেখাতে গিয়েছিলাম। এ সময় হঠাৎ করে সিলিং ফ্যান খসে স্যারের মাথায় পড়ে। স্যারের মাথা কেটে যায়, সঙ্গে আমারও মাথা কেটে যায়। আমরা এখানে ক্লাস করি। এই ভাঙা স্কুলে ক্লাস করতে আমাদের ভয় করে। আমরা নতুন স্কুল চাই।

এদিকে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কারণে গড়ভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি নির্মাণের ২৮ বছর পার হতে না হতেই ভাঙন ও ফাটল দেখা দিয়েছে মনে করছে পরিচালনা কমিটি। ওই সময়ে বিদ্যালয়ের ভবনটির নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদার এবং সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতি ও অবহেলার ফলে বর্তমানে এমন ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

গড়ভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৯৯৩-৯৪ সালে এ বিদ্যালয়ের ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণের পর ২৮ বছর পার হতে না হতেই এভাবে ভবনে ফাটল ও ভাঙন ধরবে এটি আশ্চর্যজনক। ওই সময়ে যে সকল ঠিকাদার বা যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের দুর্নীতি ও অবহেলার ফলে আজকের এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং স্কুল কমিটি আমরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর বিষয়টি জানিয়েছি। এ বিদ্যালয়টি নতুন ভবন নির্মাণের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে শিক্ষা কর্মকর্তা আমাদের আশস্ত করেছেন।

কেশবপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার সরদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, গড়ভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করার একটি প্রস্তাব আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করেছি। আশা করছি খুব দ্রুত আমরা নতুন ভবন তৈরির তালিকা পাব এবং নতুন ভবন নির্মাণ করতে পারব।

আরএআর