ফাইল ছবি 

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় দর্শনায় হরিজন (বাঁশফোড়) সম্প্রদায়ের বউভাতের অনুষ্ঠানে মাংসের পিস ছোট হওয়ায় সালিস বসিয়ে একটি পরিবারকে পাঁচ বোতল বাংলা মদ ও দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যার দিকে সম্প্রদায়ের সকল সদস্যদের উপস্থিতিতে সমাজ প্রধান মিন্টু বাঁশফোড় এ জরিমানার আদেশ দেন। 

জরিমানা পরিশোধ না করায় ওই পরিবারকে একঘরে করে দেওয়ার হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শ্রী চন্দন বাবু চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 

শ্রী চন্দন বাবু দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার দক্ষিণ চাঁদপুর হল্ট স্টেশনপাড়ার শ্রী রামু বাঁশফোড়ের ছেলে। 

ভুক্তভোগী শ্রী চন্দন বাবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ২০ এপ্রিল নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোর্ট থেকে বিবাহ রেজিস্ট্রি করি। এরপর দুই পরিবার মেনে নেওয়ায় গত ১২ অক্টোবর বরযাত্রী নিয়ে শ্বশুরবাড়ি খুলনার খালিসপুর যাই। পরদিন আমাদের বাসায় বউভাতের আয়োজন করা হয়। সেখানে বাঁশফোড় সম্প্রদায়ের সমাজ প্রধান মিন্টু বাঁশফোড়, দিতেন বাঁশফোড়, রাজু বাঁশফোড়, আকবার বাঁশফোড়, রংলাল বাঁশফোড়সহ সম্প্রদায়ের নেতাকর্মীরা মাংসের সাইজ ছোট বলে গন্ডগোল করেন। পরে তারা না খেয়ে চলে যান। 

ঘটনার দুদিন পর সন্ধ্যার দিকে সালিস ডেকে আমার বাবাকে পাঁচ বোতল কেরু অ্যান্ড কোম্পানির বাংলা মদ ও দুই হাজার টাকা জরিমানা করে। বিষয়টি আমরা না মানায় তারা আমাদের একঘরে করে দেওয়ার হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এ ঘটনায় আমার পরিবার অপমান, অপদস্তসহ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সঠিক বিচারের জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশের নিকট অভিযোগ দিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশফোড় সম্প্রদায়ের দর্শনার সমাজ প্রধান মিন্টু বাঁশফোড় ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, সম্প্রদায়ের রীতিনীতি অনুযায়ী সামাজিক নিয়ম না মানার কারণে পাঁচ বোতল মদ ও দুই হাজার টাকা জরিমানা করেছি। তারা এখনো পরিশোধ না করে উল্টো প্রশাসন ও সংবাদকর্মীদের কাছে বিচার দিচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, বউভাতে মাংসের পিস ছোট হয়েছিল। আমাদের নিয়ম অনুসারে এক কেজি মাংস ১০ টুকরো করতে হবে এবং তা প্রতিবেশীদের উপস্থিতিতে কাটতে হবে। তারা এসব মানেনি। আর আগেও তার মেয়ের বিয়েতে সামাজিক নিয়ম না মানার কারণে পাঁচ হাজার টাকা ও ১০ বোতল মদ জরিমানা করা হয়েছিল।  

দর্শনা পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের কমিশনার খালেকুজ্জামান খালেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। মদ ও টাকা জরিমানা করেছে। এখনো পরিশোধ করেনি। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছে বলে জেনেছি। 

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত সিংহ রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী এই ধরনের নিয়মকানুন মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। 

দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভুক্তভোগী পরিবার আমার কাছে এসে বিষয়টি জানিয়েছে। যেহেতু জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

আফজালুল হক/আরএআর