কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে টোলকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া এলাকায় কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে সৈয়দ মাসউদ রুমী সেতুর টোল প্লাজায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ছাত্রলীগের একটি মোটরসাইকেল বহর টোলপ্লাজা এলাকায় পৌঁছালে টোলকর্মীরা থামার নির্দেশ দেন। এ সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এরপর উভয়ের মাঝে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে কিল, ঘুষি চলে। লাঠি, লোহার রড, ইট দিয়ে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ চলে। ছাত্রলীগের গাড়িবহরে থাকা একজনকে ক্যাশের ঝুড়ি থেকে টাকা নিতেও দেখা যায়। ছাত্রলীগের হামলার পর সেতুর কর্মচারীরা তাদের ধাওয়া দেন। পরে উভয়ই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের সামনে মুজিব চত্বরে শোকসভার আয়োজন করে জেলা ছাত্রলীগ। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ। বেলা ১১টার দিকে ওই কর্মসূচিতে যোগ দিতে কুমারখালী উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা দেন। পথিমধ্যে টোলকর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলেন, শুক্রবার জেলা ছাত্রলীগের শোকসভা ছিল। তারা (টোলকর্মীরা) টোল চেয়েছিল। আমাদের হাতে সময় ছিল না। তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় টোল আদায়কারীরা। হামলায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ আলম, কুমারখালী সরকারি কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হোসেন, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন পলাশ, ছাত্রলীগের কর্মী সম্রাট, অমিত, চয়নসহ ১০ থেকে ১৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া তারা অন্তত তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছেন।

এ বিষয়ে কুমারখালী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হোসেন বলেন, বেলা ১১টার দিকে টোলপ্লাজা এলাকায় পৌঁছালে কর্মচারীরা টোল দাবি করেন। আমরা বললাম অনুষ্ঠানে দেরি হয়েছে, আমরা ছাত্রলীগ করি, আমাদের ছেড়ে দেন। ছাত্রলীগ পরিচয় শুনে আরও বেশি চড়াও হয়। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় আমাদের ওপর। 

তিনি আরও বলেন, হামলায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ থেকে ১৫ জন আহত হয়েছেন। তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে।

সেতুর ইজারাদার পারভেজ আনোয়ার তনু বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি। কর্মীরা টোলের টাকা চাওয়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। ৬ থেকে ৭ জন আহত হয়েছেন। আদায়কৃত টাকা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে তারা। মামলার বিষয়টি এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ আলম, কুমারখালী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে আমার কর্মীদের ওপর টোলপ্লাজায় দায়িত্বরত কর্মীরা হামলা চালিয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী আহত হয়েছেন।

এ বিষয়ে টোলপ্লাজায় দায়িত্বরত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাইক্রোডাইনামিকের ম্যানেজার শামীম আহমেদ জানান, বেলা ১১টার দিকে একটি মোটরসাইকেলে আসা যুবকের কাছ থেকে টোল চাইলে ওই মোটরসাইকেলে থাকা যুবক টোল আদায়কারীর ওপর চড়াও হয় এবং পেছন থেকে ৩০-৪০টি মোটরসাইকেলযোগে আসা যুবক এসে অতর্কিত হামলা চালায় টোল আদায়কারীদের ওপর। এ ঘটনায় ৬-৭ জন টোল আদায়কারী আহত হন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনার সময় কিছু টাকাও ছিনিয়ে নেয় ওই যুবকরা। হামলাকারীরা কুমারখালী উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ছাত্রলীগের সঙ্গে টোল কর্মীদের হাতাহাতি হয়েছে। কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজু আহমেদ/আইএসএইচ