দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ভুল্লী নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি ২০১৭ সালের বন্যায় ভেঙে গেছে। পরে ভাঙা সেতুর পাশে স্থানীয়রা বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে চলাচল করছেন। এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন খানসাম ও নীলফামারী সদর উপজেলার প্রায় ১০-১৫ হাজারের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। এমনকি কিছু দিন আগে বাঁশের সাঁকো থেকে পড়ে এক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, খানসমা উপজেলার আলোকঝাড়ি ইউনিয়েনের ভুল্লী হাটের পাশে নদীর মাঝখানে ভেঙে পড়ে আছে সেতুটি। সেতুর পাশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিশাল আকারের বাঁশের সাঁকো। সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করছে সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, মোটরসাইকেল ও মালামালসহ ভ্যানগাড়ি।

স্থানীয়রা জানান, সেতুর পূর্বদিকে নীলফামারী সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের নীলফামারী কলেজ ও বিএম কলেজে পড়ে। সেতুর পশ্চিমে ভুল্লীর বাজার, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি  হাফেজিয়া মাদরাসা রয়েছে। সেতুটি ভেঙে গেছে ২০১৭ সালে। এত দিনেও নতুন করে একটি সেতু নির্মাণ না হওয়ায় নীলফামারী সদর ও দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। বিশেষ করে কৃষি পণ্য আনা-নেওয়া ও ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল-কলেজে যাতায়াত করা খুবই কষ্টকর।

খানসামা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, সেতুটি ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে ভুল্লী হাটের পাশে ভুল্লী নদীর ওপরে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যে নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালের বন্যায় ভেঙে যাওয়ার পরে সেখানে অস্থায়ী সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে।

নীলফামারী জেলার কুকড়াডাঙ্গা গ্রামের সহিদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভুল্লী সেতু থেকে নীলফামারী শহরের দূরন্ত ১২ কিলোমিটার আর খানসামা উপজেলা শহর ৪ কিলোমিটার। সেতুর সঙ্গে লাগানো ভুল্লীবাজার। নদীর পূর্বপাড়ের বেশির ভাগ মানুষ হাটবাজার ও নিত্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটায় খানসামায় যাতায়াত করেন। কিন্তু পাঁচ বছর থেকে সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় আমরা খুব সমস্যায় পড়েছি। প্রায় এখানে দুর্ঘটনা ঘটছে। কিছু দিন আগে সাঁকো থেকে পড়ে মোটরসাইকেল আরোহী অরুন কুমার নামের এক শিক্ষকের মৃত্যুও হয়েছে।

খানসামা উপজেলার পূর্ববাসুলী গ্রামের বাসিন্দা সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন ,এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষক। বিশেষ করে ধান ও সবজি উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। সেতু না থাকায় ভ্যানে এসব পন্য আনা নেওয়ায় সমস্যা হয়।

নীলফামারী কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মনির ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্ষার সময় পানি বেশি হলে সাঁকো ডুবে যায়। তখন কলেজ যেতে পারি না। সেতু অনেক দিন থেকে ভেঙে  পড়ে এছ। দ্রুত নির্মাণ করা হলে আমরা শিক্ষার্থীরা ঠিকভাবে স্কুল-কলেজে যেতে পারব।

ভ্যানচালক আমিনুল ইসলাম ঢাক পোস্টকে বলেন, এই সেতু যে মেলা দিন থাকি ভাঙ্গে পড়ে তা সবাই জানে। দেখিও গেইছে অনেক বার। লেখালেখি ও মাপজোখ করি নিয়া যায়, কিন্তু ব্রিজ মেরামত হয় না। নতুন করি ব্রিজ বানায়ও না। 

পূর্ব বাসুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনমোহন বর্মন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালে আকস্মিক বন্যায় সেতুটি ভেঙে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা ও ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় সেতুর পাশ দিয়ে বাঁশের সাঁকো করে দিয়েছে। প্রতি বছর এই সাঁকো সংস্কার করতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে সাঁকো দিয়ে চলাচল বন্ধ করে অন্যের ফসলি জমি দিয়ে চলাচল করতে হয়। আর বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগের কথা আর কী বলব?

উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সেতুটি নির্মাণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যকে ডিও লেটার দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ে ২ বার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও বন্যা পুনর্বাসন প্রকল্প থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছিল। সেই তালিকায় সেতুটি অন্তর্ভুক্ত করে পুনর্নির্মানের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব পাস হলে দ্রুত নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।

ইমরান আলী সোহাগ/এসপি