নতুন ঘর উঠাতে দাবিকৃত টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছেন পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের এক লাইনম্যান। এরপরও স্বামীর ঘর থেকে ওই নারী না নেমে যাওয়ায় তাকে মারধর করে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ওই নারী বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসক জানিয়েছেন, আহত নারীর মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার পৌর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সি অ্যান্ড বি রোড সংলগ্ন মিজানুর রহমানের ঘরে এ ঘটনা ঘটে।  মিজানুর রহমান ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় পল্লীবিদ্যুতের একটি সাবস্টেশনের লাইনম্যান।

মারধরে আহত গৃহবধূ শিরিন আক্তারের মা হাসিনা বেগম জানান, তার মেয়ের তিন বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই টাকার জন্য শিরিনকে বলে। তখন শিরিনের বাবা বিদেশ থাকায় সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা দিতে পেরেছি জামায়কে। কিন্তু শিরিনের বাবা বিদেশ থেকে চলে আসার পর আমাদেরও টাকার অভাব শুরু হয়। কিছুদিন হলো বাড়ির ঘর উত্তোলনের জন্য নতুন করে আবার টাকা দাবি করে জামায়। শিরিন টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অত্যাচার শুরু করে।

হাসিনা বেগম আরও বলেন, কয়েক বছর আগে জামায়ের (মিজান) লাথিতে আমার মেয়ের গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়। তারপরও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কিছু বলিনি। তাছাড়া মিজানের বোনের জামাই স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হওয়ায় আমরা কিছু বলতে পারি না। তারা প্রভাবশালী।

তিনি বলেন, মারধর করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে যাওয়ার সময় শিরিনকে বাসা থেকে নেমে যেতে বলে। কিন্তু শিরিন তারপরও শ্বশুড় বাড়ি থেকে না নেমে যাওয়ায় বুধবার (২৫ আগস্ট) রাতে শ্বশুর মুনসুর আলী ও শাশুড়ি সেতারা বেগম মিলে শিরিনকে মারধর করে। তাতেও  শিরিন ঘর থেকে না নেমে যাওয়ায় পরের দিন সকালে পুনরায় মারধর ঘরে ঘরের দরজা দিয়ে রাখে। 

এ সময় শিরিন আত্মহত্যার চেষ্টা চালালে খবর পেয়ে আমরা মেয়েকে এনে হাসপাতালে ভর্তি করাই। আমরা জানতে পেরেছি, মিজানুর রহমান আমার মেয়েকে ডিভোর্স দিতে নোটিশ করেছে। আর আমার মেয়েকে বলেছে ঘর উত্তোলনের টাকা দিলে ডিভোর্স দিবে না।

আহত শিরিন আক্তার বলেন, শুধু স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি নয় তাদের মেয়ে, স্থানীয় নজরুল কাউন্সিলরের স্ত্রী সেলিমা বেগমও অত্যাচার চালিয়েছে। এ ঘটনায় তিনি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

অভিযুক্ত মিজানুর রহমান মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্ত্রীর শারীরীক সমস্যা আছে। তাছাড়া সে আমার মা-বাবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। এ জন্য আগেই তাকে মুখে তিন তালাক দিয়েছি। এখন চূড়ান্ত তালাক দেওয়ার জন্য নোটিশ করেছি। ঘরের টাকা না দেওয়ায় তালাক দেওয়া এবং মারধরের বিষয়ে কোনো উত্তর দেননি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও উভয় পক্ষের স্বজন ছালমা বেগম বলেন, শিরিনের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে সেটি আদৌ সন্তোষজনক নয়। উভয়পক্ষ মিলেমিশে ভালোভাবে থাকুক সেটাই কামনা। শুনেছি মিজান নাকি শিরিনের বাবার বাড়িতে তালাকের কাগজ পাঠিয়েছে। কিন্তু শিরিন এই বাড়িতে সুন্দরভাবে থাকতে তালাকের কাগজ বাড়িতে পাঠানোর কী দরকার।

বাকেরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সত্য রঞ্জন খাসকেল বলেন, এ বিষয়ে এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে খোঁজখবর নিচ্ছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরআই