বউ-বাচ্চা মিলে আমার পাঁচ সদস্যের সংসার। সবকিছু কিনে খেতে হয়, দিনমজুরের কাজ করে যা পাই তা দিয়ে সংসার চলে না। আবার একা টিউবওয়েল দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। অন্যের বাড়ি থেকে পানি এনে খাই। পানি আনতে গিয়ে মাঝে মাঝে তাদের কথাও শুনতে হয়। আমরা চার পরিবার মিলে একটি টিউবওয়েল থেকে পানি খাই। আমাদের চরে কয়েকটা টিউবওয়েল ও টয়লেটের ব্যবস্থা হলে খুব উপকার হইত। 

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর পার্বতীপুর এলাকার খাষের চরের জিয়াউল হক (৪০)। তিনি বলেন, আমাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার নৌকা ছাড়া কোনো উপায় নাই। নিজের তো নৌকা নেই, ১০ টাকার ওষুধ কিনতে নৌকা ভাড়া দিতে হয় ৫০ টাকা। কেউ আসেও না, খবরও নেয় না। দেখা যায় বন্যার সময় কেউ এসে চিড়ামুড়ি দিয়ে যায়। এটুকুই। আর সারা বছরই কারো কোনো খবর থাকে না।

ওই এলাকার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমার এখানকার সবাই দিন-মজুরের কাজ করি চলি। যা আয় হয় তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। একটা কল (টিউবওয়েল) দিতে প্রায় চার হাজারের মতো টাকা লাগে। তাহে হয় না। একটা কলের পানি আমরা ৫-৬টা পরিবার খাই। নিজের কল (টিউবওয়েল) না থাকার কারণে ছেলে-মেয়েদের খুব সমস্যা হয়। উপায় না থাকলে কী আর করা? এভাবেই চলছি।

জানা গেছে, ১৬ নদ-নদী বেষ্টিত জেলা কুড়িগ্রাম। জেলায় চর-দ্বীপসহ প্রায় চার শতাধিক চরাঞ্চল রয়েছে। এখানকার বেশির ভাগ মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এসব চরের মধ্যে দ্বীপের মতো দেখতে একটি চরের নাম খাষের চর। সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের কোলঘেঁষে চরটির অবস্থান। এখানে বসবাস করছেন প্রায় ৪০টি ভূমিহীন পরিবার। 

স্থানীয়রা জানান, খাদ্য সংকটের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় সমস্যা স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ খাবার পানি। পরিবারে সচ্ছলতা না থাকায় ভাগাভাগি করে টাকা দিয়ে ৭-৮টি নলকূপ স্থাপন করেছেন তারা। তা দিয়েই চলছে ৪০টি পরিবারের জীবন।

এখানকার বাসিন্দা বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে বার বার জানালেও তাদের পানির কষ্টের সুরাহা হয়নি। অনেকে প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আর পূরণ হয় না। ফলে খাবার পানির সংকট নিয়ে লড়াই করে বেঁচে আছে পরিবারগুলো। আবার বন্যা মৌসুমে চর তলিয়ে গেলে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ে তারা। তখন তাদের নদীর পানির ওপর নির্ভর করতে হয়।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওর্য়াডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) আব্দুল আউয়াল বলেন, আমার ওয়ার্ডের খাষের চরে প্রায় ৪০টি পরিবার থাকে। তারা অনেকেই ভূমিহীন। তাদের খাদ্য সংকটের পাশাপাশি খাবার পানিরও সংকট রয়েছে।  ৭-৮টি টিউবওয়েলের পানি দিয়ে চলে ৪০টি পরিবার। আমি একটি এনজিওর কাছ থেকে কয়েকটি টিউবওয়েল চেয়েছি, এখনো পাইনি।

এ বিষয়ে যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, প্রতি বছর বন্যার কারণে আমার ইউনিয়নে অনেক পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়। দেখা যায়, বন্যার কারণে বাড়ি ভেঙে যায়, তাই তারা টিউবওয়েল স্থাপন করতে চায় না। তবে এটা ঠিক, খাষের চরে ৬-৭টি পরিবার মিলে একটি টিউবওয়েলের পানি খান। ওই চরে টিউবওয়েলের প্রয়োজন কিন্তু সরকারিভাবে তো টিউবওয়েলের বরাদ্দ নাই। তবে কয়েকটি টিউবওয়েল ওই চরে দেওয়া গেলে পরিবারগুলো উপকৃত হতো।

জুয়েল রানা/এসপি