নিহত এনা পরিবহনের বাসচালক মনজুর ও হেলপার জাহাঙ্গীর

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানাধীন রশিদপুর এলাকায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত আটজনের মধ্যে দুইজন ওসমানীনগরের বাসিন্দা। তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা।

সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের রশিদপুরে শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস নামে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে আটজন নিহত হন। এদের মধ্যে দুইজন এনা বাসের চালক ওসমানীনগরের সাদিপুর ইউনিয়নের ধরখা গ্রামের মনজুর আলী ও হেলপার একই গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন। বিকেলে মনজুর আলী ও জাহাঙ্গীর হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুই বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। 

নিহত মনজুর আলীর চাচা লাল মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল মনজুর। তার আয়ে চলতো ছয়জনের সংসার। অনেক কষ্ট করে সে দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি আধা পাকা ঘর তৈরি করেছে। এখনও কাজ শেষ হয়নি। এখন তার দুই সন্তানকে আল্লাহ ছাড়া দেখার কেউ নেই। 

তিনি বলেন, মনজুর প্রায় ছয় বছর ধরে এনা বাসের চালক হিসেবে কাজ করেছে। তার আয়ে মা, বোন ও স্ত্রী সন্তানসহ ছয় জনের সংসার চলতো। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মনজুর ছিল সবার বড়।

এদিকে জাহাঙ্গীর হোসেনের পরিবারেরও একই অবস্থা। মনজুরের হাত ধরে প্রায় দুই বছর আগে এনা বাসে হেলপারের কাজ নিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। তার দুটি শিশু সন্তান রয়েছে। বাড়ির সবাই কান্নাকাটি করলেও তারা এখনও বুঝে উঠতে পারেনি তাদের বাবা আর নেই। জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে স্ত্রী, মা, বোনসহ ছয়জনের পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।  

জাহাঙ্গীরের বড় ভাই জাকির হোসেন বলেন, আমার ভাই গত বুধবার বাড়ি থেকে গিয়েছিল। তার এই মৃত্যু আমরা কোনোভাবেই মেনে  নিতে পারছি না। তার অবুঝ দুটি সন্তানের দিকে তাকালেই বুকটা ফেটে যাচ্ছে।

এদিকে ধরখা গ্রাম্য কবরস্থানে মনজুর ও জাহাঙ্গীরের মরদেহ দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্বজনরা। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ বাড়িতে আনার পর রাতেই তাদের দাফন করা হবে। 

প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে ওসমানীনগর উপজেলার দক্ষিণ সুরমা থানার রশিদপুর এলাকায় এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস নামে দুটি বাসের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আটজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে সাতজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।  

নিহতরা হলেন- সিলেটের উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক আল মাহমুদ সাদ ইমরান খান (৩৩), এনা পরিবহনের বাসচালক ওসমানীনগর উপজেলার ধরখা গ্রামের মঞ্জুর আলী (৩৮), সুপারভাইজার সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মিঠাভরা গ্রামের সালমান খান (২৫), হেলপার ধরখা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন (২৪), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার রাজানিয়াকান্দি পশ্চিম পাড়ার নুরুল আমিন (৫০), ঢাকার ওয়ারী এলাকার নাদিম আহমদ সাগর (২৯), সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকার শাহ কামাল (২৭) ও সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বাংলা বাজার এলাকার রহিমা বেগম (২৬)।

দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, ঘটনাস্থল থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। হাসপাতালে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ২০ জন। তাদের সবাইকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

তুহিন আহমদ/আরএআর