শরীয়তপুরে বর্ষা না থাকায় পানের পাতা তেমন বড় হয়নি। এ কারণে ফলনও কম হয়েছে। আর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পানের কম বাজারমূল্য। পানের দাম কম হওয়ায় হাসি নেই পানচাষিদের মুখে। বর্তমানে চরম বিপাকে পড়েছেন এই এলাকার পানচাষিরা। কৃষকদের অনেকে জানিয়েছেন, বর্তমানে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।

কয়েক বছর আগেও দেশের বাইরে পানের বেশ চাহিদা ছিল। সেই সময় শরীয়তপুর থেকে বিদেশে পান রপ্তানি করা হতো। তবে এখন তা বন্ধ রয়েছে। দেশের বাজার ছাড়া কোথাও তারা পান পাঠাতে পারছেন না।

কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় পানের চাষ হয়েছে ৪৮৭ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৪, নড়িয়া উপজেলায় ৪১, ভেদরগঞ্জ উপজেলায় ৪৫, ডামুড্যা উপজেলায় ১১ ও গোসাইরহাট উপজেলায় ৩৫৬ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে।

এতে ৫ হাজার ৪০৫ মেট্রিক টন পান উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জেলায় বেশ কয়েক ধরনের পান উৎপাদন হয়ে থাকে যার মধ্যে মিঠা, সাচি, মহানলী, স্থানীয় উন্নত, চালতা, বোটা পান উল্লেখযোগ্যো।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পান চাষিরা তাদের বজরা ঠিক করছেন। কেউ কেউ পান ছিঁড়ে ঢাকা পাঠানোর কাজ করছেন। সবার মুখেই হতাশার ছাপ। 

নাগেরপাড়া ইউনিয়নের পানের বোরের মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, এক গাদি পানের বোরে খরচ বছরে বিশ থেকে পঁচিশ হাজার টাকা। কিন্তু পান বিক্রি হয় পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকার। কখনো কখনো আরও কম হয়। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য কাজে চলে গেছেন। যারা আছে তারও চলে যাবে ভাবছেন।

গোসাইরহাটের ইটাউলকা গ্রামের কামরুল হোসেন বলেন, একটি পানের বোর চালাতে প্রতিবছর বাঁসের চেরা, পাটখড়ি, খড়সহ বিভিন্ন কিটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এতে উৎপাদন খরচ যে পরিমাণ হয় তা দিয়ে পান বেচে কিছু থাকে না। করোনাকালীন পানে পুরোপুরি ধরা খেয়েছি। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পান পাতা বড় হচ্ছে না। বাজারে দামও নেই। এ বছরও লস হবে মনে হচ্ছে।

আরেক পানচাষি হাফেজ মো. আলী বলেন, বর্তমানে পানচাষে যেই পরিমাণ খরচ হচ্ছে তা উঠে না। পান বিক্রির টাকায় সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বড় কথা পানের বরজ চাষের খরচও উঠাতে পারছি না। এই সময় বাজারে পানের দাম পনেরো থেকে বিশ হাজার টাকা গাদি হওয়ার কথা, কিন্তু তা এখন সাত থেকে আট হাজার টাকা। এভাবে পানের দাম কমতে থাকলে পান চাষ করা ছেড়ে দিতে হবে।

দেশ থেকে ঢাকার মোকামে পাঠানো পানের আড়তদার মো. ইউনুস মিয়া বলেন, দিন দিন দেশে পানের চাহিদা কমে যাচ্ছে। কারণ ভারত থেকে নিয়মিত পান দেশে আসছে। এতে করে দেশি পানের দাম কমে যাচ্ছে। এর ওপর বিদেশে পান রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আমাদের দেশে যে পান রয়েছে তা দেশে চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও পাঠানো যায়। সরকার যদি এদিকে নজর দেয় তাহলে আমরা কিছুটা উপকার পাব।

গোসাইরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শাহাবুদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশে গোসাইরহাটের পানের বেশ চাহিদা রয়েছে। এ এলাকার পান নিয়মিত ঢাকার বাজারে যায়। ফলন ভালো হলেও পান বড় হচ্ছে না, এতে চাষিদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। আগে ইউরোপে বাংলাদেশের পানের বাজার ছিল। কিন্তু কয়েক বছর আগে পানে সাইটোনেলা নামে একটি ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের কারণে ইউরোপ পান রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তাই পানচাষীরা মূলত দেশি বাজারের ওপরই নির্ভরশীল।

সৈয়দ মেহেদী হহাসান/আরআই