নানা দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরের ১৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ১৬ জনকে এক আদেশে বদলি করেছে ঢাকা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। বুধবার (৩১ আগস্ট) সকালে বদলির চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থলবন্দরের প্রধান কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মোহাম্মদ রুহুল আমীন।

এর আগে গত ২৫ আগস্ট আদেশের চিঠিতে ১৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়েছে।

বদলির আদেশ প্রাপ্তরা হলেন- বুড়িমারী স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) রুহুল আমীন, ট্রাফিক পরিদর্শক জাহিদুর রহমান, সালাউদ্দিন, শাহিন মাহমুদ, আমিনুল হক, ওয়্যারহাউস সুপারেনটেনডেন্ট মানিকুর রহমান, মাছুদ রানা, ফিদা হাসান, এসএম মাসুম বিল্লাহ, মিনহাজ উদ্দিন, হারুন অর রশিদ, আবুল বাসার, হিসাবরক্ষক আদনান খলিল বসুনিয়া, ক্যাশিয়ার ভ্রমর কুমার সরকার, কম্পিউটার অপারেটর হাসমত উল্লাহ ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সেলিম রেজা।

এর আগে ঢাকা পোস্টে গত ২৬ জুলাই ‘দালালের কথায় ‘চোখ বন্ধ করে’ সিল মারেন ইমিগ্রেশন অফিসার’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। 

তবে স্থলবন্দরে দায়িত্বরত পুলিশের কনস্টেবল আহসান ও বুড়িমারী স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. হাসান কবির বদলি না হওয়ায় সেখানকার যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা দুচিন্তায় পড়েছেন। তাদের দ্রুত বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে সরিয়ে নিতে অনুরোধ করেছেন তারা।

জানা গেছে, ত্রিদেশীয় বাণিজ্যিক রুট পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর। ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র এ স্থলবন্দর। বন্দরটিতে দুর্নীতি আর অনিয়মের কারণে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

একইভাবে অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে সরকারও রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছেন। বন্দরের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে ভুক্তভোগীরা দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, ওজন স্টেশনে ভারতীয় ট্রাক থেকে অবৈধ টাকা আদায়, খাদ্যশস্যের ট্রাকে চাঁদা, বিল শাখায় জালিয়াতি করে সরকারি রাজস্ব আত্মসাৎ, আগত পণ্যবাহী গাড়ির ওজনে গরমিল, রাত্রীকালীন ট্রাক চার্জ আদায় করে আত্মসাৎ, ছুটি ছাড়াই কর্মস্থলের বাইরে থাকা।

অভিযোগ আমলে নিয়ে গোপনে তদন্ত করে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যানের কাছে গত ৭ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন পাঠায় দুদক। স্থলবন্দ কর্তৃপক্ষ ১৪ আগস্ট প্রতিবেদন পেয়ে ১৬ আগস্ট আমলে নেয়। এরপর গত ২৫ আগস্ট এ স্থলবন্দরের ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ১৬ জনকে বিভিন্ন বন্দরে বদলির আদেশ দিয়ে চিঠি পাঠায় স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।

স্থলবন্দরের যাত্রা শুরুর পর থেকে এবারই প্রথম একই আদেশে ১৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারির বদলি হচ্ছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ স্থলবন্দরের পরিচালক ডি এম আতিকুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে বদলিকৃতদের ৩১ আগস্টের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুড়িমারী স্থলবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির একটি লিখিত অভিযোগ চলতি বছরে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হয়। এতে ভারতীয় ট্রাক থেকে ওজন স্টেশনে অবৈধভাবে টাকা আদায়, খাদ্যশস্যের ট্রাক থেকে টাকা গ্রহণ, বিল শাখায় জালিয়াতি করে সরকারি রাজস্ব আত্মসাৎ, আগত পণ্যবাহী গাড়ি ও ওজনের গাড়ির গরমিল, রাত্রিকালীন ট্রাক চার্জ জমা না দিয়ে আত্মসাৎ, ১-২ দিনের ছুটি নিয়ে দীর্ঘ দিন কর্মস্থলে না থাকা, ভুয়া চালান করা, ওজন স্কেলে পণ্যের ওজন কম দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ, বহিরাগতদের নিয়ে কর্মস্থলে আড্ডা দেওয়াসহ নানা অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব লুটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী ও বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিশাদ নেওয়াজ বলেন, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীরা দুদকে অনিয়মের অভিযোগ দিয়েছেন শুনেছি। সে কারণে তাদের বদলি করতে পারে। তবে বদলি হওয়াতে ব্যবসায়ীদের একটু সমস্যা হবে।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) রুহুল আমীন বলেন, বুড়িমারী স্থলবন্দরে ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে আমিসহ ১৬ জনকে বদলি করা হয়েছে। দুর্নীতির বিষয়টি আমি জানি না। এখানে দুর্নীতির কিছুই নেই। বিভিন্ন ধরনের বেনামি চিঠিপত্র অনেকেই অনেকভাবে দেন। আর এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। মূলত একে অপরকে কাঁদা ছোড়াছুড়ির ঘটনায় এ রকমটা করা হয়েছে।

নিয়াজ আহমেদ সিপন/এসপি