রংপুরের গঙ্গাচড়ায় এক অটোরিকশা চালককে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি সাইফুল ইসলাম ও সফিকুল ইসলাম সম্পর্কে আপন ভাই।

বুধবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে রংপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক তারিক হোসেন এ রায় প্রদান করেন।

হত্যা মামলার চার বছর পর রায় ঘোষণা হলেও দুজন আসামিই পলাতক রয়েছেন। এ কারণে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারক এ রায় ঘোষণা ঘোষণা করেছেন।

আদালত ও মামলার বিবরণ সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার নেকিরহাট গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে অটোরিকশা চালক আবুল কালাম আজাদ। ঘটনার সময় ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট চারজন ব্যক্তি আবুল কালামের অটোরিকশায় করে গঙ্গাচড়া উপজেলার খলেয়া নামক স্থানে যাওয়ার জন্য ভাড়া নেয়। এরপর ওই এলাকার জনৈক ডা. নুর আলমের বাড়ির পার্শ্বে অটোরিকশা চালক আবুল কালাম আজাদকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধানখেতে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে অটোরিকশা ছিনতাই করে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় নিহত অটোরিকশা চালক আবুল কালাম আজাদের মা মোখলেছেনা বেগম বাদী হয়ে গঙ্গাচড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ রংপুর সদর উপজেলার গোকলপুর ধনীপাড়া গ্রামের মফিজুল ইসলামের দুই ছেলে সফিকুল ইসলাম ও সাইফুল ইসলাম কালুকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুই ভাই অটোরিকশা চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাই করার ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন। পরে তারা দুজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

পুলিশ ওই দুই আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জসিট দাখিল করেন। এরপর আসামিরা জামিনে মুক্ত হলে আত্মগোপনে চলে যান। এখন পর্যন্ত পলাতক এ দুই ভাইকে পুলিশ আটক করতে পারেনি। এরই মধ্যে আদালত এই মামলায় ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ করে। বুধবার সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে আসামি সফিকুল ইাসলাম ও সাইফুল ইসলামকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির আদেশ প্রদান করে রায় দেন আদালত।

এ মামলায় সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী নয়নুর রহমান টফি জানান, সাক্ষ্য-প্রমাণে বাদীপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। দুই আসামি গ্রেপ্তার হবার পর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করায় হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত। আদালত দুই আসামির ফাঁসির আদেশ প্রদান করায় বাদীপক্ষ এ রায়ে সন্তুষ্ট।

দুই আসামি গ্রেপ্তার হবার কিছুদিন পর জামিন নিয়ে পলাতক হয়ে যান। তাদের অনুপস্থিতিতেই রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। গ্রেপ্তার হওয়ার দিন থেকে রায় কার্যকর করা হবে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আলাউদ্দিন আলমগীর জানান, এ রায়ে তারা সন্তুষ্ট নন, সে কারণে রায়ের কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানান।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই