গোপালগঞ্জ শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে মধুমতি লেক। আর এই লেকটিতে জন্ম নেওয়া শ্যাওলা ও কচুরিপানাসহ বিভিন্ন জলজ আগাছা পরিষ্কারের জন্য পাঁচ মাস আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে কেনা হয় আ্যকুয়াটিক উইড হারভেস্টার। যা কেনার পর থেকেই অকেজো অবস্থায় ভেসে বেড়াচ্ছে লেকের পানিতে। ফলে সনাতন পদ্ধতিতে শ্রমিককে মজুরি দিয়ে পরিষ্কার করাতে হচ্ছে লেক।

এদিকে দুই মাস আগে ঢাকা থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়েছেন, যন্ত্রটি ব্যবহারের উপযোগী নয়। বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একে অপরকে দোষারোপ করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দরপত্রে যে সাইজের মেশিন দেওয়ার কথা ছিল, তার চাইতে এক সাইজ ছোট মেশিন দিয়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, মেশিন কেনার সময় তাদের সব কাগজপত্র দেখিয়েছি। সেখানে সাইজ উল্লেখ ছিল। তখন তারা বলেছিল, ঠিক আছে। 

জানা গেছে, গোপালগঞ্জ শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা মধুমতি লেকের দুই মাথা মধুমতি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় জেলার বিভিন্ন বিল থেকে নদীতে ভেসে আসা কচুরিপানাসহ বিভিন্ন জলজ আগাছা লেকের পানিতে ঢুকে পড়ে। এছাড়া লেকের পানিতে জন্ম নেয় নানা ধরনের জলজ আগাছা। ফলে সৌন্দর্য হারায় লেকটি।

লেকের সৌন্দর্য রক্ষার্থে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাম্পান ট্রেডার্সের মাধ্যমে ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে কেনা হয় জলজ আগাছা পরিষ্কারের যন্ত্র আ্যকুয়াটিক উইড হারভেস্টার। এতে দ্রুত সময়ে স্বল্প খরচে লেক থেকে জলজ আগাছা পরিষ্কার করা সম্ভব।  

গত ১৪ এপ্রিল জলজ আগাছা পরিষ্কারের যন্ত্রটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা। উদ্বোধনের পর থেকেই পাঁচ মাস ধরে অকেজো অবস্থায় লেকের পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে যন্ত্রটি। এখন পর্যন্ত এর কোনো সুফল পায়নি জেলা শহরের বাসিন্দারা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জেলার নানা পেশার মানুষ।

জেলা শহরের বাসিন্দা আকরাম খান বলেন, রাষ্ট্রের এত টাকা দিয়ে মেশিনটি ক্রয় করল, কিন্তু তার কোনো কার্যক্রম আমরা এখনো দেখলাম না। এর কোনো সুফল আমরা পেলাম না। রাষ্ট্রের লাখ লাখ টাকা পানিতে ভাসছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের এক শিক্ষক ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাষ্ট্রের লাখ লাখ টাকা পানিতে ভাসছে। যে কারণে মেশিনটি কেনা হলো আজ পর্যন্ত তার কোনো সুফল আমরা পেলাম না। লাখ লাখ টাকা দিয়ে মেশিন কেনার পরও শ্রমিককে মজুরি দিয়ে লেকটি পরিষ্কার করাতে হচ্ছে। তাহলে পানি উন্নয়ন বোর্ড এত টাকা দিয়ে মেশিনটি কিনে কী করল?

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফইজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ দল এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেছেন, মেশিনটি ব্যবহারের উপযোগী নয়। আর এখানে প্রয়োজন পাঁচ কোটি টাকার যন্ত্র। ২০-৩০ লাখ টাকায় কাজ হবে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলেছি, হয় ফেরত নিয়ে যাও, নাহলে দাম সমন্বয় করো।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাম্পানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, যে সাইজের মেশিন দেওয়ার কথা ছিল, আমি সেই সাইজের মেশিন দিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড হাইড্রোলিক বাদ দিয়ে মেপেছে, তাই এক ফুট ছোট হয়েছে। অদৃশ্য কারণ দেখিয়ে তারা বলছে, দাম সমন্বয় করে বিল নিতে। আমরা বলেছি মেশিন ফেরত দিতে। তারা মেশিন ফেরতও দেয় না দামও সমন্বয় করে না।

এসপি