নানা অনিয়মে চলছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের ৭৮নং দক্ষিণপূর্ব আস্কর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে আসেন না। আসলেও কেউ সময় মতো আসেন না। শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক কম। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, শিক্ষকরা ইচ্ছা মতো স্কুলে আসেন আবার চলে যান। কিছু জিজ্ঞেস করলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। কেউ বলেন তার স্বজন অসুস্থ। কেউ বলেন স্কুলে আসার জন্য নৌকা পাননি। মূলত প্রান্তিক পর্যায়ে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় শিক্ষকরা ঠিকমতো স্কুলে না এসে বেতন তুলে নেন। 

অভিযোগ রয়েছে, কাগজে-কলমে প্রথম থেকে পঞ্চম পর্যন্ত ৪৫ জন শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে সর্বোচ্চ ৮/১০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে এই স্কুলে। এছাড়া বিদ্যালয়ে বসে দুপুরের খাবার রান্না করে খান শিক্ষক-কর্মচারীরা।

স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক পপি হালদার বলেন, আমি শিক্ষকদের বলেছি অনেক ভরসা করে আপনাদের এখানে আমার সন্তান দিয়েছি। কিন্তু ঠিকমতো এখানে লেখাপড়া হয় না। তারা বলেন- ‘তোমাগো মাইয়া-পোলা স্কুলে আসুক আর না আসুক তাতে আমাগো কিছু আসে-যায় না। আমরা টেবিল পড়ালেও সরকারি বেতন মাইর (বন্ধ) নাই।’ কিন্তু শিক্ষকরাতো এমন কথা বলতে পারেন না।

আরেক অভিভাবক আরতি রাণী বলেন, এই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এই অঞ্চলের শিক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখানে লেখাপড়া তেমন হয় না। শিক্ষকরা বলেন, ‘আমাগো ছাত্র লাগবে না-একজন ছাত্র থাকলেই হবে।’ আমরা বেতনতো পাব।

আগৈলঝাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত বলেন, বাগধার দক্ষিণপূর্ব আস্কর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ওই এলাকার শিক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্কুলের নিজস্ব মাঠ, অবকাঠামো এবং শিক্ষক পর্যাপ্ত রয়েছে। শিক্ষকদের বাড়িও বিদ্যালয়ের আশপাশে। কিন্তু স্থানীয়দের মাধ্যমে জেনেছি তারা স্কুলের শিক্ষার্থী বাড়াতে কোনো কাজ করেন না। এমনকি ঠিকমতো স্কুলেও আসেন না। এসব কাজ অত্যন্ত গর্হিত। আমি মনে করি বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর এসব অন্যায্য কাজের বিরুদ্ধে উদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

সরেজমিনে বুধবার (৩১ আগস্ট) ওই বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ৯টা ১০ মিনিটেও স্কুলে কোনো শিক্ষক বা কর্মচারী উপস্থিত হননি। গণমাধ্যমকর্মীর উপস্থিতি টের পেয়ে সাড়ে ৯টার দিকে সহকারী শিক্ষক সাইদুর রহমান এসে উপস্থিত হয়ে অফিস ও শ্রেণি কক্ষের দরজা-জানালা খোলেন। বিদ্যালয়ের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। সকাল সোয়া ১০টার দিকে ২য় শ্রেণির দুইজন, সাড়ে ১০টার দিকে তৃতীয় শ্রেণির তিনজন শিক্ষার্থী আসে। তাদের নিয়েই শুরু হয় বিদ্যালয়ের পাঠদান।

সহকারী শিক্ষক সাইদুর রহমান জানান, আজ (বুধবার) তিনি একাই স্কুল চালাবেন। তিনজন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের স্বজন অসুস্থ এবং আরেক সহকারী শিক্ষক ছুটিতে থাকায় তারা আসবেন না। এছাড়া তিনি যে পথে আসেন সেখানে খেয়ার নৌকার মাঝিকে সময় মতো না পাওয়ায় তারও আসায় দেরি হয়। 

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ঊষা রানী বিশ্বাস দাবি করেন, তার মেয়ে বরিশাল অমৃত লাল দে কলেজের ছাত্রী। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি স্কুলে যেতে পারেননি।

আরেক সহকারী শিক্ষিকা দোল বাড়ৈ জানান, তিনি ছুটিতে রয়েছেন। এছাড়া স্কুলে রাইচ কুকার ব্যবহার করে রান্নার কোনো কাজ তিনি করেন না বলে দাবি করেন।

স্কুলটির বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্ত বলেন, সরকারি বিধান অনুসারে প্রাথমিক বিদ্যালয় সকাল ৯টায় খুলে বিকেল ৪টায় ছুটি হওয়ার কথা। কিন্তু দক্ষিণ পূর্ব আস্কর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সর্ম্পকে যে অভিযোগ পেলাম তা খতিয়ে দেখা হবে। এখানে কারও গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সোহেল মারফ বলেন, দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারের নির্দিষ্ট যে পাঠসূচি রয়েছে তা মেনে চলতে বাধ্য। আগৈলঝাড়ার দক্ষিণপূর্ব আস্কর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সর্ম্পকে যে অভিযোগ পেলাম তা তদন্ত করে দেখা হবে। যদি সত্যিকার অর্থেই পাঠদানে অবহেলার চিত্র পাওয়া যায় তাহলে অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর