কুদ্দুস মুন্সী

যুবক বয়সে প্রতিবেশীর ছাগল বেঁধে রাখায় বাবার হাতে মার খেয়ে অভিমানে স্ত্রী-সন্তান রেখে বাড়ি ছেড়েছিলেন আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী। এরপর আর বাড়ি ফেরেননি তিনি। পরিবার অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোথাও তার সন্ধান পায়নি।

এভাবেই কেটে গেছে ৪৭ বছর। স্বজনদের ধারণা ছিল হয়তো মারা গেছেন কুদ্দুস মুন্সী। কিন্তু না, অভিমানে বাড়ি ফেরেননি তিনি। আশ্রয় নিয়েছিলেন পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর জেলায়।

সম্প্রতি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার রানীগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে প্রতিবেশী হারুন মিয়ার সঙ্গে দেখা হয় কুদ্দস মুন্সীর। এ সময় হারুন মিয়াকে চিনে ফেলেন কুদ্দুস। পরে পরিচয় জানাজানির ভয়ে রংপুরের পীরগঞ্জের কুমেতপুর এলাকায় অবস্থান নেয় কুদ্দুস মুন্সী। এরপর পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়ে কুদ্দুসের অভিমান ভাঙিয়ে বাড়ি নিয়ে আসেন।

কুদ্দুস মুন্সীর বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের হাজিরহাট গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত খোকা মুন্সীর ছেলে।

কুদ্দুস মুন্সীর নাতি নাইম মিয়া বলেন, স্বাধীনতার কিছু দিন পরের কথা। দাদা তখন ২৩ বছর বয়সী যুবক। এ সময় তিনি পার্শ্ববর্তী গ্রামের রোকেয়া নামে আমার দাদিকে বিয়ে করেন। দেড় বছরের মাথায় তাদের কোলজুড়ে আবদুল করিম নামে আমার বাবার জন্ম হয়। 

সে সময় প্রতিবেশীর ছাগল ধরে বেঁধে রাখার অপরাধে দাদাকে পিটুনি দেয় তার বাবা। এরপর অভিমানে বাড়ি ছাড়েন তিনি। চলে যান দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার একটি গ্রামে। সেখানে অপরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে অবস্থান নেন তিনি। এরপর বিভিন্ন কলকারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।কিছু দিন পর সেখানে বসতি গড়ে আরেকটা বিয়ে করেন। সেই সংসারে তার দুটি সন্তান রয়েছে।

নাইম মিয়া আরও বলেন, জন্মের পর দাদাকে দেখিনি। শুনছি দাদা হারিয়ে গেছেন। এখন দাদাকে কাছে পেয়ে ভালো লাগছে।

কুদ্দুস মুন্সী বলেন, একটি ছাগল আমাদের জমির ধান খেয়েছিল। সেজন্য ছাগলটাকে ধরে এনে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছিলাম। এ অপরাধে আব্বা লাঠি দিয়ে মারেন। পরে অভিমান করে বাড়ি ছেড়েছিলাম এবং প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আর বাড়িতে ফিরব না। প্রতিজ্ঞা পালনের জন্য আর বাড়িতে আসা হয়নি। তবে কষ্ট হয়েছে সবাইকে ছেড়ে থাকতে।

গাইবান্ধা নাকি দিনাজপুরে থাকবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন দুটো ঘর, দুটো সংসার। যতদিন বাঁচি আছি দুই বাড়িতেই থাকব।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পলাশবাড়ীর কিশোরগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিন্টু বলেন, বাবা মারধর করায় কুদ্দুস মুন্সী অভিমানে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। দীর্ঘ ৪৭ পর তার পরিচয় পাওয়া গেছে। তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম স্বামীকে বাড়ি নিয়ে এসেছেন।

রিপন আকন্দ/এসপি