রাজশাহী অঞ্চলে প্রতি পিস ডিম উৎপাদনে খামারিদের লোকসান ২ টাকা করে। মাংস উৎপাদনেও বাড়ছে লোকসানের পাল্লা। ক্রমাগত লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে গেছে এই অঞ্চলের অন্তত ২০ হাজার মুরগির খামার। 

শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মুরগির খামারিরা। দুপুরের দিকে নগরীর মাস্টার শেফ রেস্তোরাঁয় ওই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে রাজশাহী পোল্ট্রি ফার্মার ঐক্য পরিষদ। 

সংবাদ সম্মেলনে সরকারি উদ্যোগে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করে খামারি পর্যায়ে প্রতিটি ডিমে ৬০ থেকে ৮০ পয়সা এবং প্রতিকেজি মুরগিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা নির্ধারণের দাবি জানানো হয়।

একেই সঙ্গে স্বল্প মূল্য ভ্যাকসিন, মেডিসিন ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত, পোল্ট্রিখামারগুলোতে স্থাপিত বৈদ্যুতিক মিটারগুলোকে কৃষিভিত্তিক মিটারে রুপান্তর, স্বল্প সুদে ও সহজ পদ্ধতিতে জামানতবিহীন ঋণপ্রদান এবং ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পুনর্বাসনে প্রণোদনার দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি আহ্বায়ক হাসিবুল আলম লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দেশের রাজশাহী অঞ্চলে বিভিন্নভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে অনেক খামারি। লোকসানের বোঝা টানতে না পেরে ইতোমধ্যেই রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁ অঞ্চলে চলতি বছরে বন্ধ হয়েছে প্রায় অর্ধেক পোল্ট্রি খামার।

তিনি বলেন, একজন খামারির জমির খাজনা, ১ দিন বয়সের বাচ্চার মূল্য, খাদ্য, মেডিসিন খরচ, কর্মচারীর বেতন ও বিভিন্ন রোগবালাইয়ে মুরগির মৃতের হার বিবেচনাপূর্বক বর্তমানে সাদা ডিম উৎপাদনে খরচ পড়ছে ৯ টাকা ৫০ পয়সা এবং লাল ডিমের ক্ষেত্রে খরচ পড়ছে ১০ টাকা। 

একজন খামারি বর্তমানে সাদা ডিমের মূল্য পাচ্ছেন ৭ টাকা ৬০ পয়সা এবং লাল ডিমে পাচ্ছেন ৮ টাকা। এতে প্রতিদিন সাদা ডিমে লোকসান গুনতে হচ্ছে ১ টাকা ৯০ পয়সা এবং লাল ডিমে ২ টাকা। সেই হিসেবে ৫ হাজার ডিম উৎপাদনকারী খামারির প্রতিদিন লোকসান ১০ হাজার টাকা। প্রতিমাসে লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজার দর ও খাদ্য খরচসহ অন্যান্য খরচাদির হিসাব করে প্রতি কেজি সোনালীর উৎপাদন খরচ পড়ছে ২২০ থেকে ২০০ টাকা, হাইব্রিড সোনালীর ২০০ থেকে ২১০ টাকা এবং ব্রয়লারের ক্ষেত্রে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। অধিকাংশ সময় খামারিরা তাদের কাঙ্খিত মূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

বর্তমানে দফায় দফায় মেডিসিনসহ প্রয়োজনীয় সকল পণ্য সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে মাংসজাত মুরগির ডিম উৎপাদন অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পোল্ট্রির খাবার ও মেডিসিনের মূল্যবৃদ্ধি হলেও ২০০৯ সাল থেকে অদ্যবধি ডিমের দাম বাড়েনি।............ 

২০০৮ সালে ৫০ কেজি ফিডের দাম ছিল ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা। বর্তমানে সেই ফিডের দাম ৩০০০ টাকা। একইসঙ্গে মেডিসিন, ভ্যাকসিন, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতনসহ প্রয়াজনীয় সকল সামগ্রীর খরচ দ্বিগুন হয়েছে। 

একই কারণে, মাংসের মুরগি উৎপাদনের ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি বিরাজমান। অথচ দেশে পোল্ট্রি সেক্টরের উন্নয়ন সরকারি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থাকলেও মূলত এগুলোর কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই। এতে কোনোভাবেই ভোগান্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না খামারিরা।

খামারিদের দাবি, খাদ্য ও মেডিসিন ছাড়াও সরকারি নিয়ন্ত্রন না থাকায় প্রতিদিন অস্বাভাবিক হারে উঠা-নামা করছে ১ দিন বয়সী বাচ্চার দাম। একদিন বয়সী বাচ্চার দাম কখনো ১৫ টাকা, কোনো কারণ ছাড়াই রাতের ব্যবধানে সেই বাচ্চা কখনো ৩০ টাকা, কখনো বা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট নজর নেই বাচ্চা উৎপাদনকারী হ্যাচারি প্রতিষ্ঠনগুলোর দিকে। এতে করে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে খামারিরা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-রাজশাহী পোল্ট্রি ফার্মার ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মানিকুজ্জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল আলম ও রাজশাহী পোল্ট্রি ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন প্রমুখ।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএএস