হঠাৎ বাতাসে ভেসে আসছে বাঁশির সুর। কখনো ওরে সাম্পানওয়ালা তুই আমারে করলি দিওয়ানা, কখনো বা- যাও পাখি বলো তারে, সে যেন ভোলে না মোরে। কখনো আবার জনপ্রিয় ভারতীয় গান- বহুত পেয়ার কারতিহে তুমকো সানামসহ ডজনখানেক গানের সুর। সুর শুনে মনে হবে হয়তো দেশবরেণ্য কোনো বংশীবাদক বাঁশিতে সুর তুলছেন। আসলে তেমন কেউ নন- ইব্রাহীম নামে এক যুবক পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের পাড়ে বসে এভাবেই বাঁশিতে সুর তুলছেন। 

শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে সমুদ্র পাড়ে বসে এক মনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন মো. ইব্রাহীম। সামনে চিরকুটে লেখা পেটের দায়ে বাঁশি শুনাই, সবাইকে সালাম-আদাব জানাই। তার সামনেই একটি প্লাস্টিকের পাত্র রাখা। পর্যটকরা অনেকেই সামর্থ অনুযায়ী টাকা দিচ্ছিলেন।

আপন মনে একের পর এক পুরোনো দিনের গানের সুর বাঁশিতে তুলছিলেন বংশীবাদক ইব্রাহীম। কেমন যেন মোহগ্রস্ত হয়ে বাঁশির সুর শুনছিলেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আগত পর্যটকরা। ইব্রাহীমের বাঁশির সুরে খুঁজে ফিরছিলেন যেন নিজেকে, নিজের হারানো অতীতকে।

বাঁশিতে সুর তোলার ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় ইব্রাহীমের সঙ্গে। তিনি জানান, তার বয়স ৪৬ বছর। বাড়ি হাটহাজারী উপজেলায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জোবরা গ্রামের আলাওল পাড়ায়। বিয়ে করেছেন ১৮ বছর হলো। তার ঘরে রয়েছে ১৫ বছরের শিশু ও ৮ বছরের এক মেয়ে। 

বাঁশি বাজানো তার পেশা কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইব্রাহীম বলেন, বিষয়টিকে আপনি যেভাবে নেন। এটি আমার নেশা। আর হ্যাঁ, বাঁশি পেটের দায়েও বাজাই, তবে ভিক্ষা করি না। কেউ মনের খুশিতে কিছু দিলে নিই, কারও কাছে দাবি করি না।

প্রতিদিনই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁশিতে সুর তোলেন ইব্রহীম। মুহূর্তেই তার বাঁশির সুর শুনতে থমকে যান কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আগত পর্যটকরা। তার বাঁশির সুরে মুগ্ধ হন হাজারো পর্যটক। বাঁশির সুর শুনে অনেকেই টাকা-পয়সা দিয়ে যান তাকে। সেই টাকাতে চলে তার সংসার। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত কলাতলী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবনীসহ সৈকতের  বিভিন্ন স্থানেই তাকে বাঁশি বাজাতে দেখা যায়। বাঁশি বাজিয়ে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ শত টাকা উপার্জন করেন তিনি।

ইব্রাহীমের মূল পেশা কৃষি কাজ। কথায় কাথায় তিনি বলেন, কৃষি কাজ করে তার সংসার চলছে না। সমুদ্র সৈকতে বাঁশি বাজালে বাড়তি কিছু টাকা পাই, এ কারণে বাঁশি বাজাই।

কয়েক বছর ধরে তিনি নিয়ম করে শহরের পথে পথে বাঁশি বাজিয়ে চলছেন। মাঝে মাঝে বিভিন্ন বিয়ে বাড়ি বা অনুষ্ঠানেও ডাক পড়ে তার। সেদিন ভালো কিছু আয়ও হয়।

শেষ বেলায় ইব্রাহীম বলেন, নিজের এ জীবন নিয়ে কোনো আফসোস নেই। ১৫ বছরের একটা ছেলে আছে, নাম আরিফ। এ ছাড়া আরেকটি মেয়ে আছে। তাদের পড়াতে চাই, মানুষের মতো মানুষ করতে চাই।

সাইদুল ফরহাদ/আরআই