পিরোজপুরে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন। 

এরপর সেতুটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে দর্শনার্থীরা ভিড় করেন। সেতুটি চালু হওয়ায় আনন্দে আত্মহারা স্থানীয়রা। বিকেলেও সেতুতে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে।  
 
সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুটি উদ্বোধনের পরপরই সাধারণ মানুষের হেঁটে পারাপারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে আনন্দে ভাসছে পিরোজপুরের মানুষ। বিকেলে সেতুতে ঘুরতে এসেছেন হাজারো মানুষ। 
 
সেতুতে ঘুরতে আসা সাফিন নামে একজন বলেন, এই সেতু হওয়ায় বৃহত্তর খুলনা বরিশালের সঙ্গে আমাদের এক নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নদীর ওপার পড়াশোনার জন্য সেতুটি অনেক ভূমিকা পালন করবে। আমরা এই সেতুর মাধ্যমে ফেরির ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেলাম। এতে আমরা অনেক খুশি। বিভিন্ন প্রয়োজনে আমরা দ্রুত এখন নদী পার হতে পারবো। ফেরি ও ট্রলারের কারণে সেতুর দুই পাড়ের মানুষকে অনেক ভোগান্তির পোহাতে হয়েছে। এতো সুন্দর একটি সেতু আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। 
 
পরিবার নিয়ে সেতুতে ঘুরতে আসা পায়েল বলেন, অনেক দিন অপেক্ষায় ছিলাম পিরোজপুরের চীন মৈত্রী সেতু কবে উদ্বোধন হবে। আজ আমরা অনেক খুশি। তাই পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসছি। 
 
বেড়াতে আসা আখি আক্তার বলেন, পরিবার নিয়ে আজ সেতুতে ঘুরতে আসছি। অনেক ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে পদ্মা সেতুতে ঘুরতে আসছি। 


 
স্থানীয় ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি আগে এখানে সেখানে ঘুরে ঘুরে ব্যবসা করতাম।  এখন এই সেতুর কল্যাণে আমার কিছু ব্যবসা হবে। এ নিয়ে আমি অনেক খুশি। সেতুর রাস্তার পাশে দোকান দিয়েছি। এ দিয়ে ভালোভাবে চলে যাবে। 

রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার পর থেকে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হবে। 

সেতুটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাসুদ মাহমুদ সুমন জানান, ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেকুটিয়া পয়েন্টে এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ বছর ‘চায়না রেলওয়ে ১৭তম ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড’ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আওতায় ‘চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ রিকোনিসেন্স ডিজাইন ইনস্টিটিউট’ এই সেতু নির্মাণ করেছে। গত ৭ আগস্ট চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর উপস্থিতিতে ঢাকায় চীনা দূতাবাসের ইকনোমি মিনিস্টার বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি হস্তান্তর দলিলে স্বাক্ষর করেন।

তিনি আরও জানান, প্রায় এক কিলোমিটার মূল সেতুর উভয় প্রান্তে ৪৯৫ মিটার ভায়াডাক্টসহ সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫০০ মিটার। ৯টি স্প্যান ও ৮টি পিলার বিশিষ্ট ১৩.৪০ মিটার প্রস্থের এই সেতুর পিরোজপুর ও বরিশাল প্রান্তে ১ হাজার ৪৬৭ মিটার সংযোগ সড়কসহ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নির্বঘ্নে রাখতে আরও ২টি ছোট সেতু ও বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এ সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৮৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৫৪ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে চীন সরকার। বাকি ২৪৪ কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ। সেতুটি ১০টি পিলার এবং ৯টি স্প্যানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এটি বক্স গার্ডার টাইপের সেতু। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৯৯৮ মিটার এবং অ্যাপ্রোচ সেতুর দৈর্ঘ্য ৪৯৫ মিটার। এছাড়া সেতুর দুই পাড়ে রয়েছে ১ হাজার ৪৬৭ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক।

আরএআর