বউয়ের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় মাকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যাওয়া সেই ছেলে মনিরুল ইসলামের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন। 

রোববার চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বালিগ্রাম মহল্লায় বৃদ্ধাকে দেখতে গিয়ে এ প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। একইসঙ্গে ওই বৃদ্ধাকে কিছু খাদ্যসামগ্রী ও নগদ অর্থ দেন।  

শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার বালিগ্রামের একটি গলির পাশে অসুস্থ বৃদ্ধা মাকে ফেলে যায় ছেলে মনিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী। পরে স্থানীয়দের দেওয়া খবরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেন জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আব্দুল হাকিম। 

জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, দেশে একজন মানুষও অসহায়, ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না, এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি। কোনো মানুষের অসহায়ত্ব মানবতার মা শেখ হাসিনা সহ্য করেন না। যেই ছেলেরা এই কাজটি করেছে, তিনি একটি গর্হিত অপরাধ করেছেন। পিতা-মাতা হলো ভালোবাসার জায়গা, মায়ের প্রতি দায়িত্বহীনতা করা উচিত হয়নি।  

জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের আরও বলেন, বৃদ্ধার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ চিকিৎসার সকল দায়িত্ব নিয়েছে জেলা প্রশাসন। আমরা তার পাশে রয়েছি। পাশাপাশি যেই ব্যক্তি কাজটি করেছেন, তাকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। কারণ এতে সমাজে শিক্ষা হবে যাতে কেউ বাবা-মাকে অবহেলা না করে। 

এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, বৃদ্ধা ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। তাই তিনি তার ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন কি না, তা আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না। তবে ছেলে যেহেতু আইন ভঙ্গ করেছেন, তাই তিনি অব্যশই আইনের আওতায় আসবেন। পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩ এর লঙ্ঘন হয়েছে এখানে। যেহেতু সেই বৃদ্ধা তার মেয়ের কাছেই নিরাপদ, তাই সেই দিক বিবেচনায় মেয়ের পরিবারকেও সহায়তা প্রদান করা হবে। 

মর্জিনা বেগমের মেয়ে নাসিমা বেগম ঢাকা পোস্টকে জানান, মাকে আমার ভাই ও তার স্ত্রী আমার বাড়ির পেছনে একটি পরিত্যক্ত জায়গায় ফেলে চলে যায়। পরে স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকলীগ নেতা আব্দুল হাকিম মাকে উদ্বার করে আমার বাড়িতে নিয়ে আসে। আমার বাড়িতেও থাকার জায়গা না থাকায় পাশের বাড়ির একটি কক্ষে মাকে রেখেছি। জেলা প্রশাসক নিজে এসে খাবার ও নগদ অর্থ দিয়ে গেছেন। এছাড়াও মায়ের সকল চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। এখন কিছুটা হলেও মাকে নিয়ে স্বস্তি পেয়েছি। 

তিনি আরও জানান, মায়ের মোট ৫ কাঠা জমি ছিল। এক কাঠা বিক্রি করে এক বোনের বিয়ে দিয়েছিল। পরে দুই ভাই মিলে দুই কাঠা করে জমি বিক্রি করে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আমি ও আমার সেই বোন মাকে নিজেদের বাড়িতে দেখাশোনা করি। কিন্তু গত দুই মাস থেকে মাকে ছেলের বাড়িতে পাঠায়। ভাইয়ের বউ মাকে মেনে নিতে পারেনি। তাই ভাই ও ভাবী মাকে এভাবে ফেলে গেছে। আরেক বোন নিজেও অসুস্থ ও তার মেয়ের বাড়িতে থাকে। তাই সেখানেও তাকে রাখা সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়েই পাশের বাড়ির একটি কক্ষে রেখেছি। 

মো. জাহাঙ্গীর আলম/এনএফ