সবজি ও আবাদ মৌসুমে পর্যাপ্ত সার না পেয়ে হতাশ টাঙ্গাইলের কৃষকরা। এদিকে সরকারি সার ছাড়া বাইরে থেকে সার কিনে বেশি দামে বিক্রি করলেও জরিমানা গুনতে হচ্ছে ডিলারদের। এ কারণে ডিলাররা বিএডিসির সার ছাড়া অন্য কোনো সার বিক্রি করতে না পারায় সংকট দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে জেলার মধুপুর উপজেলার গারোবাজার এলাকায় দেখা গেছে, ডিলারদের কাছে সার না থাকায় কৃষকরা ফিরে যাচ্ছেন। তবে সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের দাবি, তাদের নিজ নিজ উপজেলায় সার পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় গত আগস্ট মাসে চাহিদা ছিল ইউরিয়া সার ১২ হাজার ২৮ মেক্ট্রিক টন, টিএসপি সার ১ হাজার ৩৪২, ডিএপি সার ৪ হাজার ৪২৯ এবং এমওপি সার ৪ হাজার ৮৬৬ মেক্ট্রিন টন। এর বিপরীতে পাওয়া গেছে ইউরিয়া সার ৭ হাজার ১৫ মেক্ট্রিক টন, টিএসপি সার ৪ হাজার ৭, ডিএপি সার ১ হাজার ৩৭৬ এবং এমওপি সার ১ হাজার ১৬৫ মেক্ট্রিক টন। যা কৃষকদের চাহিদার তুলনায় কম পাওয়া গেছে। সার সংকটের কারণে অনেক কৃষকই আবাদ করতে পারছেন না। ফলে ধান, আনারস, কলাসহ বিভিন্ন ফল ও ফসল আবাদ বিঘ্নিত হচ্ছে এবং উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে বাজারে কৃত্রিম সার সংকটের কারণে অনেক ব্যবসায়ী নিম্নমানের সার বাজারে বিক্রি করছেন। অনেকেই আবার পটাশ ও এমওপি সার তৈরি করে কৃষকদের কাছে বিক্রি করছেন।

মধুপুর উপজেলায় কলা ও আনারসসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল ও সবজির হাট ও বাজার হিসেবে পরিচিত গারো বাজার। এই গারো বাজারের রাস্তার এক পাশে ঘাটাইল উপজেলা এবং অপর পাশে মধুপুর উপজেলা। এই বাজারের মধুপুর অংশের বিএডিসি সারের ডিলার সরকার ট্রেডার্স। যার মালিক হচ্ছেন মনতাজ উদ্দিন সরকার। তবে স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, নিম্নমানের সার বিক্রি করছে ডিলার মনতাজ। তিনি বালু ও রং মিশিয়ে তৈরি করছেন এমওপি সার। অভিযোগের ভিত্তিতে গত মাসে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নকল এমওপি সার জব্দ করে নমুনা সংগ্রহ করে উপজেলা কৃষি অফিস। তবে ওই ডিলারের বিরুদ্ধে এখনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

গারো বাজারে কথা হয় চাষি লোকমান হোসেনের সঙ্গে। তিনি দুই-তিন পর পর সারের খোঁজ নিতে আসেন বাজারে।তার আনারসের বাগানের জন্য সার প্রয়োজন। কিন্তু চাহিদামতো সার পাচ্ছেন না তিনি।

লোকমান হোসেন বলেন, বেশ কিছু দিন হলো ঘুরছি। সার পাচ্ছি না। আনারসবাগানে সার দিতে হবে। এখন সারের অভাবে আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। সার সংকটে আমার মতো অনেকেই আবাদ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে।

কৃষকরা জানান, সারের ডিলারদের কাছে কোনো সার নেই। কয়েক দিন সারের দোকানে গিয়ে ইউরিয়া, এমওপি টিএসপি সার পায়নি। শুধু বলে শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে বরাদ্দ পেলে দেওয়া হবে।

গারো বাজারের ডিলার মনতাজ উদ্দিন সরকার বলেন, চাহিদা মতো সার পাওয়া যাচ্ছে না। তিন প্রকার সার মিলে ৭০ বস্তার চাহিদা দিলেও পাওয়া যাচ্ছে ১৫ বস্তা। এতে দুই-এক দিনের মধ্যে সার শেষ হয়ে যায়। ফলে বাকি আনারস ও কলা চাষিরা বেশি পরিমাণ সার পাচ্ছে না। তবে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কোনো সার তৈরি করি না। বিএডিসি কর্তৃক সার বিক্রি করি।

মধুপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল বলেন, পর্যাপ্ত সার মজুত রয়েছে। কৃষকরা সার পাচ্ছেন। এছাড়া নকল সার বিক্রির অভিযোগে গারো বাজার থেকে সারের নমুনা সংগ্রহের জন্য পাঠিয়েছি। প্রতিবেদন পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলার বিএডিসির উপপরিচালক ড. মো. ইসবাত জানান, জেলায় সারের সংকট সাময়িক সময়ের জন্য হয়েছে। এ মাসেই সংকট কেটে যাবে। কৃষকরা না বুঝেই জমিতে বেশি পরিমাণে সার প্রয়োগ করেন। তারা মনে করেন, জমিতে বেশি সার প্রয়োগ করলে বেশি ফলন হবে। আসলে বিষয়টি তা নয়। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েও এ সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না। তাই কৃষকরা বেশি সার নেওয়ায় বাজারে সারের সংকট তৈরি হয়। তবে সার পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে এবং কৃষকরাও পাচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর টাঙ্গাইলের উপপরিচালক আহসানুল বাশার বলেন, সারের কোনো সংকট নেই। জেলায় কৃষকরা সার পাচ্ছেন। সারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।

অভিজিৎ ঘোষ/এসপি