ভোট ল্যাওয়ার (নেওয়ার) আগে দেওয়া কথা রাইখাছে (রেখেছে) শেখ হাসিনা। ভোটের লিয়্যা (নিয়ে) গদিতে (ক্ষমতায়) যাওয়ার আগে কথা দিয়্যাছিল, ১০ কেজি চাইল (চাল) খাওয়াইবে। সেই কথা অনুযায়ী হামরাকে (আমাদের) চাইল দিছে। দুই বছর ধইরা ১০ টাকা কেজি কইর‍্যা চাইল কিন্যা খাইনু। এবারই প্রথম ১৫ টাকা কেজি চাইল কিনছি। হামারঘে (আমাদের) লাইগ্যা (জন্য) এই চাইল কতো যে উপকারী বইল্যা বুঝাইতে পারব না। কারণ বাজারে এখন ৫০-৬০ টাকা কেজি কইর‍্যা চাইল। 

কথাগুলো বলছিলেন বিধবা সুলেখা বেগম (৫৫)। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারোঘরিয়া ইউনিয়নের চামাগ্রাম এলাকায় তার বাড়ি। পরিবারে উপার্জনক্ষম তেমন কেউই নেই তার। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল পেয়ে ভীষণ খুশি তিনি। 

‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ এই স্লোগানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে। সোমবার (০৫ সেপ্টেম্বর) সকালে সদর উপজেলার বারোঘরিয়া ইউনিয়নের চামাগ্রামে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। জেলব্যাপী এই কর্মসূচির আওতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে কার্ডধারী হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। 

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন। এ সময় তিনি বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় জেলায় প্রায় ৬০ হাজার পরিবার সরাসরি উপকৃত হবে। শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই এই কর্মসূচিতে খাদ্য বিভাগ ১৮০০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করবে। অসহায়, হতদরিদ্র, খেটে-খাওয়া দিনমজুর শ্রেণির মানুষরা কম দামে এই চাল কিনে সরাসরি উপকৃত হবেন। 

জেলা প্রশাসক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির এই কর্মসূচি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। অনেকেই কর্মসূচিকে বির্তকিত করতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেন। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে কোনো প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি করলে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি কর্মসূচিতে স্বচ্ছতা আনতে চাল বিক্রির কার্যক্রমকে সঠিকভাবে তদারকি করা হচ্ছে। 

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাহমুদুল হাছান জানান, সরকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির প্রতি কেজি চালে প্রায় ২৭ টাকার বেশি ভুর্তকি দিচ্ছে। যাতে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী এই সুবিধা পায়। এই কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগী সকলের তথ্য অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেন একই ব্যক্তি একাধিক সুবিধার আওতায় না আসে ও অসহায় দরিদ্র কেউ বাদ না পড়ে। 

১৫ টাকা কেজি দরে চাল কিনে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাগরী বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েক বছর থেকেই এই চাল পাই। প্রথম থেকেই ১০ টাকা কেজি দরে চাল কিনছি। কিন্তু জিনিসপত্রের অনেক দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার থেকে ১৫ টাকা করা হয়েছে। বাজারে এখন ৫৫-৬০ টাকা কেজি দরে চলে বিক্রি হচ্ছে। ওই চাল কিনে খেতে পারব না আমরা। ১৫ টাকা কেজির চাল আমাদের অনেক খরচ কমিয়েছি। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফফাত জাহান, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার মো. তৌফিক আজিজ, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাকির হোসেন, কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক আরাফাত রহমান, ডিলার তরিকুল ইসলামসহ সুবিধাভোগীরা।

জাহাঙ্গীর আলম/এসপি