গ্রাম্য দাঙ্গায় লাখাই উপজেলার মকসুদপুর গ্রামের শামীম মিয়া অল্প বয়সেই বাবাহারা হয়ে আশ্রয় নেন হবিগঞ্জ সরকারি শিশু পরিবারে। অপরদিকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের জাহেনা বেগম বাবাহারা হয়ে আশ্রয় নেয় শ্রীমঙ্গল সরকারি শিশু পরিবার বালিকা শাখায়। শামিম কম্পিউটার সাইন্সে ডিপ্লোমা ডিগ্রি এং জাহেনা বেগম এসএসসি পাস করেছেন। 

সমাজসেবা অধিদপ্তরের একটি বার্ষিক খেলাধুলার আয়োজনে পরিচয় হয় তাদের। এরপর তারা একে অপরকে ভালোবাসেন এবং এই সম্পর্ককে স্থায়ী রূপ দিতে আগ্রহী হন। 

বিষয়টি শামীম তার প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান সাইফুল ইসলামকে অবগত করেন। তিনি বিষয়টি জানান সরকারি শিশু পরিবারের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামানকে। পরে জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে তিনি সানন্দে রাজি হন সুন্দর এই আয়োজনে। 

দুই অনাথের ঘরবাঁধার স্বপ্ন পূরণে উদ্যোগ নেওয়া হলে অনেকই এগিয়ে আসেন। জেলা প্রশাসন থেকে বড় ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়ানোর পাশাপাশি সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সমাজসেবী লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেন তিনি। 

সোমবার দুপুরে হবিগঞ্জ সরকারি শিশু পরিবারে আয়োজন করা হয় এক ব্যতিক্রমধর্মী বিয়ের।

বর ও কনে এতিম হলেও আয়োজনের কমতি ছিল না বিয়ের অনুষ্ঠানে। শামীম ও জাহেনার বিয়েকে কেন্দ্র করে শিশু পরিবারে ছিল সাজ-সাজ রব। গেট আর সাজসজ্জার কমতি ছিল না সেখানে। সমাজের ভিত্তবানরা নিয়ে আসেন নানান উপহার। নিবাসীদের মাঝে ছিল ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা।

জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান, পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রফিকুল আলমের উপস্থিতিতে কাজী ও মৌলানা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। অতিথিদের জন্য আপ্যায়নে অংশ নেন সবাই। সেখানে ছিল রোস্ট, গরুর মাংসের রেজালা, ঘণ্টো আর দই। ব্যতিক্রমধর্মী এই বিয়ে আয়োজন করায় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেন। তারা এ ধরনের উদ্যোগে সহযোগিতা করতে পেরেও আনন্দিত। ভবিষ্যতেও তারা এ ধরনের ভালোকাজে সহযোগিতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।

হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মিজানুর রহমান শামীম বলেন, এই আয়োজন ব্যতিক্রম। আমরা সব সময় ভালো কাজের সঙ্গে আছি। লন্ডন থেকে দেশে আসা বিশিষ্ট সমাজ সেবক অধ্যাপক আব্দুল হান্নান স্ব-পরিবারে আসেন বিয়ের অনুষ্ঠানে। বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত। তিনি বলেন, জীবনে অনেক বিয়েতে গিয়েছি। এই প্রথম একটি এতিমের বিয়েতে এসে খুব ভালো লাগল।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের ভালো কাজে উৎসাহ দিয়ে থাকেন। কেউ যাতে নিজেকে অসহায় মনে না করে, সেজন্যই এই আয়োজন। সকলে মিলে এ ধরনের ভালো কাজ করতে পারলে আমরা সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারব। নব-দম্পতিদের প্রতিও শুভেচ্ছা জানান তিনি।

হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সমাজে এ ধরনের কাজ সবার সামনে উদাহরণ সৃষ্টি করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাশেদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমাদের এই আয়োজনে অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। সেটা না হলে এ ধরনের আয়োজন সম্ভব হতো না।

এই বিয়ে আয়োজন করায় কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন শামীম মিয়া ও জাহেনা বেগম। তারা এই আয়োজনে নিজেদেরকে এতিম হিসেবে আর অসহায় ভাবছে না। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন নব-দম্পতি।
 
এমএএস