হামার স্বামীকে আইনা দেন। আমি তাক ছাড়া তিন বেটিকে (মেয়েকে) নিয়া কীভাবে বাঁচমো। ছোট দুই বেটি (মেয়ে) আব্বা আব্বা করছে, তার আব্বা আর নাই। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন, কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের গারুহাড়া গ্রামের মৃত নুর ইসলামের (৪০) স্ত্রী সালমা বেগম (৩২)। 

তিনি আরও বলেন, মুই (আমি) এখন কিভাবে বাচ্চাদের বাঁচাইম। আল্লাহ মোক (আমাকে) নেও, হামার স্বামীকে আনি (ফিরিয়ে) দেন।

নিহত নুর ইসলামসহ তিন শ্রমিক গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে টাঙ্গাইলের গোপালপুরে একটি রাইস মিলে ছাদ ভেঙে পড়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে। তারা সবাই সদর উপজেলার যাত্রাপুর ও পাঁচগাছী ইউনিয়নের গারুহাড়া ও ওয়াপদা বাজারের বাসিন্দা।

নিহত নুর ইসলামের চাচা বাছর উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নুর ইসলামরা দুই ভাই। দুইজনে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। কিছুদিন আগে নুর ইসলাম বাড়ি থেকে কাজের উদ্দেশ্য টাঙ্গাইল গেছে। সে রাইস মিলে কাজ করে তার বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও তিন কন্যা সন্তানকে খাওয়ায়। সেই নুর ইসলাম আজ নাই। মারা গেছে দুর্ঘটনায়। তার ছোট সংসারটার কি হবে এখন? 

এদিকে নিহত নুর ইসলামসহ বাকি আরও দুই শ্রমিকের বাড়িতেও চলছে কান্না আর আহাজারি। নিহত আরেক শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম (২৫) এর বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম। আশরাফুলের মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছে। বাবা শোকে পাথর হয়ে বসে আছেন। বছর খানেক আগে বিয়ে করেছেন আশরাফুল। 

আশরাফুলের বাবা বাচ্চু মিয়া বলেন, আমি কাজ করতে পারি না। ছেলের আয় দিয়েই চলছে আমার কোনো রকম সংসার। সে গত ৪ দিন আগে সংসারের হাল ধরতে টাঙ্গাইলের একটি রাইস মিলে কাজ নেয়। রাতে শুনতে পাই ছেলে আমার মারা গেছে। বাবা থাকতে  ছেলের মৃত্যুর খবর সহ্য করতে পারছি না। 

আরেক শ্রমিক নাইমুল ইসলামের বাড়িতেও চলছে কান্না ও আহাজারি। সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, মরদেহ কুড়িগ্রামের পথে। এই মুহূর্তে সিরাজগঞ্জে আছে। আসলে তাদের দাফন সম্পন্ন করা হবে। 

প্রসঙ্গত, টাঙ্গাইলের গোপালপুরে একটি রাইস মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তারা। গতকাল রোববার রাতে মিলের ছাদ ভেঙে পড়ে ওই তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। 


জুয়েল রানা/এমএএস