ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সড়কের পাশে। এতে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ভোগান্তি বেড়েছে ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী ও এলাকাবাসীর।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরকান্দা বাজারের কলেজ বালিয়া মহল্লায় নগরকান্দা পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের তালমা-জয়বাংলা আঞ্চলিক সড়কের পাশে বকুল মিয়া নামে এক ব্যক্তির জায়গায় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। আনুমানিক সাত শতাংশ জমিতে ফেলা হচ্ছে এ বর্জ্য। বাজারের কাঁচা বাজার, পেঁয়াজের হাট, বিভিন্ন আবাসিক ভবনের বর্জ্য বেশি রয়েছে সেখানে। নগরকান্দা বাজারের কলেজ বালিয়ার ওই অংশে রড সিমেন্টের দুটি, তিনটি ফলের গোডাউন, তিনটি কাঠের আসবাবপত্র তৈরির দোকানসহ অন্তত ১৪টি দোকান রয়েছে। এছাড়া আশপাশে অনেকগুলো পরিবারও বসবাস করছে।

এই সড়কটি নগরকান্দা উপজেলা সদরের সঙ্গে পাশের গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরসহ দক্ষিণের অন্যান্য জেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক। এই সড়ক দিয়ে নগরকান্দার একমাত্র সরকারি নগরকান্দা কলেজে যেতে হয়। এতে ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরা।

আরও দেখা যায়, বিভিন্ন সময় আগুন দিয়ে এই আবর্জনা পোড়ানোয় সেখানে চারটি গাছ পুড়ে মারা গেছে। চলাচলের ক্ষেত্রে পথচারীদের মুখে কাপড় দিয়ে যেতে হয়। এছাড়া পাশের বাসস্ট্যান্ডেও আবর্জনার দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন সকালে পৌরসভার বর্জ্যবাহী তিনটি পিকাপ আপে করে এসব বর্জ্য তিন বছর ধরে ফেলা হচ্ছে। আগে এই বর্জ্য সরকারি নগরকান্দা মহাবিদ্যালয়ের কাছে সড়কের পাশে একটি ফাঁকা জায়গায় ফেলা হতো। 

নগরকান্দা পৌর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে ৭ দশমিক ৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে নগরকান্দা উপজেলার নগরকান্দা ইউনিয়ন ও লস্করদিয়া ইউনিয়নের অনেকাংশ ভেঙে নগরকান্দা পৌরসভা গঠন করা হয়। ওই সময় নগরকান্দা নামের ইউনিয়নটি কোদালিয়া-শহীদনগর ইউনিয়ন হিসেবে নামকরণ করা হয়। তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী জিল্লুর রহমান এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস রয়েছে পৌরসভাটিতে।

এই পথ দিয়ে চলাচলকারী অটোবাইকের চালক জালাল মোল্লা বলেন, সড়কের পাশে খোলা জায়গায় আবর্জনা ফেলায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।

সরকারি নগরকান্দা মহাবিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র তাসিন আরিক বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে এখানে এভাবেই আর্বজনা ফেলে সড়কের পাশে ভাগাড় বানানো হয়েছে। এ নিয়ে কয়েকবার ফেসবুকে লেখালেখি করেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ অন্যত্র ময়লা ফেলার উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো আগুন দিয়ে ময়লা পুড়িয়ে ফেলেছে। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর।

ওই এলাকার বাসিন্দা তানভীর হাসান বলেন, আগে পৌরসভার বর্জ্য নগরকান্দা কলেজের কাছাকাছি সড়কের পাশে ফেলা হতো। সেখানে বাদ দিয়ে বাজারের আরও কাছাকাছি এই জায়গাটিতে এখন ফেলা হচ্ছে।

নগরকান্দা মহল্লার বাসিন্দা সালেহা বেগম বলেন, এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গেলে মুখে কাপড় দিয়ে যেতে হয়।আমাদের অনেক কাজেই দিনে কয়েক বার নগরকান্দা বাজারে যেতে হয়। কিন্তু ওখানে গেলে দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এখানে আবর্জনা না ফেলে যেখানে বসতি নেই, সেখানে ফেললে আমাদের জন্য অনেক ভালো হয়। এই দুর্গন্ধ আর সহ্য করতে পারছি না।

সড়কের পাশে আবর্জনা ফেলায় জনভোগান্তির কথা স্বীকার করেছেন পৌর মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকার। তিনি বলেন, আমাদের ছোট পৌরসভা। সক্ষমতা কম। সড়কের পাশে ময়লা ফেলায় ওই এলাকার বাসিন্দা ও পথচারীদের ভোগান্তির বিষয়টি আমার জানা আছে। আমরা অন্য একটি জায়গা খুঁজছি। যেখানে ময়লা ফেললে মানুষের ভোগান্তি হবে না। জায়গাটি পেলে ওখানে আর আর ময়লা ফেলা হবে না।

জহির হোসেন/এসপি