নাটোরের লালপুরে অসহায় হাশেম প্রামাণিকের পাশে দাঁড়িয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার কচুয়া কারিগরপাড়া গ্রামে তার বাড়িতে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা। তাকে শুকনো খাবার প্রদান, নগদ পাঁচ হাজার টাকা সহায়তা ও তার চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজখবর নেন ইউএনও।

এ সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ বসাক, আড়বাব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

হাশেম প্রামানিক নাটোরের লালপুর উপজেলার কচুয়া কারিগরপাড়া গ্রামের আবু বক্কর প্রামানিকের ছেলে। সড়ক দুর্ঘটনার পর থমকে গেছে তার জীবন। এখন তিনি শয্যাশায়ী। 

এর আগে গত রোববার ( ৪ সেপ্টেম্বর) ‘ব্যথায় কাতরাচ্ছেন ৪০ বছর ধরে ‘লাশ টানা হাশেম’’ শিরোনামে জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নজরে আসে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের। এরপর তিনি উপজেলা প্রশাসনকে হাশেমের খোঁজখবর ও নগদ অর্থ  সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দেন। 

লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিউজটি প্রথমে জেলা প্রশাসকের নজরে আসলে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে নির্দেশ দেন তার খোঁজখবর নিতে ও সহায়তা করতে। সে মোতাবেক সোমবার বিকেলে তার বাড়িতে যাই এবং নগদ ৫ হাজার টাকা সহায়তা, শুকনো খাবার প্রদান করি। পরবর্তীতে তার চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা সহায়তা তহবিল থেকে উনি যেন সহায়তা পান সে বিষয়ে উনাকে সহযোগিতা করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সহায়তা পেয়ে হাশেম প্রামানিক বলেন, আমি অনেক খুশি ইউএনও মহোদয় আমার বাড়িতে আমাকে দেখতে এসেছেন। আমার খোঁজ-খবর নিয়েছেন। আমার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। আমি প্রশাসনের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিউজটি দেখার পর তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তার বাড়িতে শুকনো খাবার ও নগদ পাঁচ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য দ্রুতই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, অসহায় মানুষদের পাশে জেলা প্রশাসন সব সময় থাকবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ জানুয়ারি প্রতিবেশী এক ভাতিজার মেয়ের বাড়ি থেকে ফিরছিলেন হাশেম। ওই ভাতিজার নিজের ভ্যান গাড়ি রয়েছে। তাই তিনি হাশেমের ভ্যান চালাচ্ছিলেন। আর হাসেম ভ্যানের ডান পাশে বসেছিলেন। মালঞ্চি বাজার পার হওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে ইঞ্জিনচালিত একটি ভ্যান সজোরে তার পায়ে ধাক্কা দেয়। ওই গাড়ির সামনের দুটি রড নাটসহ তার পায়ের মাংসের ভেতর চলে যায়। হঠাৎ ধাক্কায় ভ্যানটি উল্টে গেলে তার পায়ের হাড় ভেঙে যায়।

স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে প্রথমে তাকে রাজশাহী এবং পরে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে পর পর দুইবার অস্ত্রোপচার করতে তার ১৮ কাঠা জমি ও বাড়িতে পালন করা দুটি গরুর বাছুর বিক্রি করতে হয়েছে। এখন তার তিন কাঠা জমি রয়েছে। ২০ দিন পর তার আরও একটি অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা রয়েছে। অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা, সংসারের খরচের পাশাপাশি অস্ত্রোপচারের টাকা জোগাড় কীভাবে হবে ভেবেই দিশেহারা হাসেম।

হাশেমের সংসারে দুই ছেলে আর তিন মেয়ে রয়েছে। সবারই বিয়ে হয়েছে। দুই ছেলে শুকুর আর গাফফারও ভ্যান চালায়। তাদের সংসার আলাদা। স্ত্রীর এক চোখ অপারেশনের পর অনেক দিন থেকেই তিনি অসুস্থ। এখন মাত্র এক চোখে দেখেন তিনি। দুর্ঘটনার পর মাঝে মাঝে দুই ছেলে কিছু সহযোগিতা করেছে। এছাড়া দুই থানা থেকেও সামান্য কিছু টাকা পাঠিয়েছিলেন। এ অবস্থায় চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে প্রধানমন্ত্রী, পুলিশ, প্রশাসনসহ সমাজের হৃদয়বান ও বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চান হাশেম।

তাপস কুমার/আরএআর