ছোট-বড় ১৬ নদ-নদীবেষ্টিত উত্তরের সীমান্তঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রাম। এ জেলায় প্রায় চার শতাধিক চরাঞ্চল রয়েছে। এসব চরাঞ্চলে ৫ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এখানকার বেশির ভাগ মানুষ এখনো দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছেন। জেলায় দারিদ্রতার হার ৭১ শতাংশ।

এদিকে জেলার জনসংখ্যা ২৩ লক্ষাধিক হলেও নেই কর্মমুখী ভারী কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান। যার কারণে প্রতি বছর বন্যা আর নদীভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে শত-শত পরিবার। পরে কাজের সন্ধানে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ছুটে যান এ অঞ্চলের কর্মজীবী মানুষ। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে কুড়িগ্রাম শহরে একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি টেক্সটাইল মিল। তবে লোকসানের অজুহাতে মিলটি ২০১১ সালে বন্ধ করে দেয় সরকার। উদ্যোক্তা তৈরি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিসিক শিল্প নগরী গড়ে তোলা হলেও সেখানেও মেলেনি সুফল। ফলে কর্মের সুযোগ না থাকায় এখানকার মানুষজন শ্রম বিক্রি করতে পাড়ি জমাচ্ছেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের জাহিদুর ইসলাম জাহিদ (২৫) বলেন, আমি এইচএসসি পাস করছি। কুড়িগ্রামে যে একটা ছোটখাট চাকরি নেব, সে উপায় নেই। অবশেষে ধারদেনা করে একটা মোটরসাইকেল কিনছি। তা দিয়ে যাত্রী পরিবহন করি। সারা দিন গাড়ি চালালে কামলার দামটা ওঠে। যেদিন বৃষ্টি হয়, সেদিন তো আবার যাত্রী পাওয়া যায় না, বসে থাকতে হয়। 

কথা হয় সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের শুলকুর বাজার এলাকার এনামুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, হামার এখানোত (এখানে তো) কোনো কাজ নাই। টুকিটাকি ওয়া গাড়তেছি (আমন রোপণ করছি)। এই কাজ শ্যাষ (শেষ) হলে তো রিকশা চলা নাগবে (লাগবে), না হয় ইট ভাটাত কাজ করতে হবে। কী আর করার কন, ঠিখোঁজি (নিদিষ্ট) তো কোনো কাজ-কাম নাই। এইভাবে চলি আরকি।

ওই এলাকার আমিনুল ইসলাম নামে এক দিনমজুর বলেন, হামার (আমার) এডাই (এখানে) কৃষি কাজ ছাড়া কাজ নাই। ওয়া গাড়া (রোপা আমন) কাজ পাইছি তা করতেছি। কিছুদিন পর হয়তো বা নিড়েনি ( পরির্চযা) করার কাজ করমো (করবো) তার পর সারা বছর আর কাজ নাই, বসে থাকা নাগবে (লাগবে)।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট কুড়িগ্রাম জেলার আহ্বায়ক ও সিনিয়র সাংবাদিক শ্যামল ভৌমিক বলেন, আপনারা জানেন কুড়িগ্রামে দারিদ্রতার হার ৭১ শতাংশ। এখানে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠা এবং প্রতি বছর বন্যা ও নদীভাঙনে বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এক্ষেত্রে বলব, নদীভাঙন রোধ ও কৃষি সেক্টরে যদি কোনো শিল্প কারখানা গড়ে তোলা যায়, তাহলে হয়তো বেকারত্ব অনেকটা দূর হবে। 

কুড়িগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি অলক সরকার বলেন, কুড়িগ্রামের মানুষ এখনো দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছেন। এই অঞ্চলের মানুষের স্থায়ীভাবে কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। আমরা উদ্যোক্তা চাচ্ছি, যারা এখানে শিল্প কারখানা গড়ে তুলবে অথবা মাঝারি ধরনের কারখানা করতে চায়। কোনো উদ্যোক্তা যদি কলকারখানা করতে চায় এখানে, তারা আসলে চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে ওইসব উদ্যোক্তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, কুড়িগ্রাম তো একটি পিছিয়ে পড়া জেলা। আমরা কিন্তু সবচেয়ে এখানে গুরুত্ব দিচ্ছি শিক্ষায়। শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ও অশিক্ষিত যুবক যারা আছেন, তাদের আমরা যদি কারিগরিভাবে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে পারি, তারা তাদের নিজেদের কাজগুলো করতে পারবে। সেক্ষেত্রে আমরা যেটা করেছি, এখানকার মানুষদের কিন্তু বিদেশে যাওয়ার প্রবণতাটাও কম। এর জন্য কিন্তু একটা চিঠিও লেখা হয়েছে। যাতে কুড়িগ্রামের জন্য একটা আলাদা কোটা বিবেচনা করা হয়। বিশেষ কোটা থাকলে অনেকেরই বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বাড়বে। 

এসপি