রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়ন ও ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের মাঝে মরা পদ্মার ওপর নির্মিত সেতুর নির্মাণকাজ তিন বছরেরও শেষ হয়নি। নির্ধারিত সময়ে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন দুই ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে খেয়া নৌকায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মান্নান গাছির খেয়াঘাটের সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের সঙ্গে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে। খুব সহজেই কম সময়ে দুই ইউনিয়নের মানুষ যাতায়াত করতে পারবেন। এছাড়া খেয়াঘাটের দুই পাশের একাধিক হাট-বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাছাড়া এসব অঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্যসেবার জন্য নিয়মিত ফরিদপুর শহরে যাতায়াত করে থাকেন। দ্রুত ও স্বল্প সময়ে যাতায়াতের জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রোগী ও সাধারণ মানুষ এ ঘাট ব্যবহার করে থাকেন। এক্ষেত্রে তাদের পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। তাই এলাকাবাসী এখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (এমএসআরডিপি) প্রকল্পের আওতায় ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যর সেতুটি এলজিইডির নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বরিশালের মেসার্স লী কনস্ট্রাকশন-মান (জেভি) সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে। সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৮৪ লাখ ৯ হাজার ১২৫ টাকা। সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ২৬ জুলাই তারিখে। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো শেষ হয়নি সেতুর নির্মাণকাজ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গোয়ালন্দের উজানচর ইউনিয়ন থেকে ফরিদপুর যাওয়ার সব থেকে সহজ যোগাযোগ মাধ্যম মান্নান গাছির খেয়া ঘাট। প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে খেয়ায় এই ঘাট দিয়ে য়াতায়াত করেন। উভয় এলাকার মানুষের সুবিধার জন্য সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হলেও তা এখন বন্ধ রয়েছে।

উজানচর ইউনিয়নের সাহাজদ্দিন মাতুব্বর পাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইমান আলী শেখ, রহিম মোল্লা, আকরাম খাঁ বলেন, দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এই খেয়াঘাট দিয়ে যাতায়াত করেন। নদীর ওপর সেতু না থাকায় কৃষি পণ্য ও রোগী পরিবহন এবং সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে অনেক পথ ঘুরতে হয়। এতে করে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।

ফরিদপুর সদর উপজেলার আনন্দ বাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, আনন্দবাজার এলাকায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় উজানচর ইউনিয়নের মঙ্গলপুর দাখিল মাদরাসা, সাহাজদ্দিন মাতুব্বর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জামতলা হাইস্কুলে আমাদের এলাকার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার জন্য প্রতিদিন নানা ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়।

মান্নানগাছি খেয়াঘাটের মাঝি আ. সাত্তার খাঁ বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। সেতু না থাকায় তারা আমার দড়িটানা নৌকায় পার হয়ে থাকে। সেতু নির্মাণ হলে উভয় এলাকার মানুষের যাতায়াত সহজ হবে।

উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা বলেন, সেতুর নির্মাণকাজ বর্তমানে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। আমি ইঞ্জিনিয়ারসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বার বার তাগিদ দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমান খাঁ বলেন, কাজের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে ঠিকাদারকে কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৩ আগস্ট একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের সময় দেওয়া হয়েছে। 

মীর সামসুজ্জামান/এসপি