"তুমি রহিম তুমি রহমান শোন আমার ফরিয়াদ, কবুল করো কবুল করো আমার মোনাজাত"- মঞ্চে খুবই ভক্তির সঙ্গে হামদ-নাত গেয়ে চলেছেন শিল্পী সৈয়দ জহিরুল হক জামান। সামনে বসা শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শুনছেন। ততক্ষণে গানের কথা আর সুরে যেন মিশে গেছেন সবাই। এরপর এক এক করে শিল্পীরা নিয়ে এলেন দেশের গান, ভাষার গান, জাতির পিতাকে নিয়ে লেখা গানও। ছিল পদ্মাসেতু নিয়েও রচিত গান। বাদ যায়নি বিরহ, প্রেম, মাটির গানও। সবশেষে লোকসংগীত নিয়েও হাজির হন শিল্পী।   

মোট ১৭টি গানের গীতিকার একজনই। প্রতিভাবান এই গীতিকারের নাম শরীফুল ইসলাম সরকার। তার গান নিয়েই শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) ছুটির দিনে এমন মিষ্টি সন্ধ্যায় সংগীতপ্রেমিরা এসে জড়ো হয়েছিলেন ময়মনসিংহ নগরীর এশিয়ান সংগীত জাদুঘরে। 

১৭টি গানের মধ্যে ১১টিই সুর করেছেন সৈয়দ জহিরুল হক জামান, তিনি গেয়েছেনও তিনটি গান। বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী শেলী চন্দ গেয়েছেন তিনটি গান, এরমধ্যে একটি গানের সুরও তিনিই করেছেন। এছাড়াও দুটি করে গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সোহান মোহাম্মদ হানিফ, ফয়জুল্লাহ রুমেল, খায়রুল ইসলাম হীরক ও ঐশি। ছিল জামান ও ঐশির দ্বৈত গান। একটি করে গানে সুর ও কণ্ঠ দিয়েছেন মিজান বাউলা ও জয়নাল বাউল। বর্ণমালা সাংস্কৃতিক একাডেমি আয়োজিত মনোমুগ্ধকর পুরো এ অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পরিষদের সদস্য সারওয়ার জাহান।

একের পর এক গান শেষে দর্শক শ্রোতার মুহুর্মুহু করতালি আর প্রশংসায় ভেসেছেন শরীফুল ইসলাম। যখন গানের সুরে সবাই ভাসছিল মঞ্চের এক পাশে তা দেখছিলেন শরীফুল। নিজের রচিত গান সবাইকে মুগ্ধ হয়ে শুনতে দেখে আবেগাআপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। আনন্দাশ্রুতে বেজে উঠে তৃপ্তির ঝংকার।

অনুষ্ঠান শেষে গীতিকার শরীফুল ইসলাম সরকার বলেন, আমার লেখা গানগুলো যেভাবে দর্শক-শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়েছে তাতে আমি সত্যিই আপ্লুত। সকলেই শেষ পর্যন্ত থেকে গানগুলো শুনেছেন এটাই আমার পরম পাওয়া। এতে করে লেখার ক্ষেত্রে আরও বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছি। 

তিনি আরও বলেন, আগামী দিনেও আমার দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য লিখে যাব। নিজের অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, বাঙালি সংস্কৃতির জন্য কাজ করে যেতে চাই। কেননা আমাদের সংস্কৃতির যদি অবক্ষয় ঘটে তবে আমাদের কঠিন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে। তাই অবশ্যই আমাদের অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সকলের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পরিষদের সদস্য সারওয়ার জাহান বলেন, শিল্প ও সংস্কৃতির নগরী ময়মনসিংহের অর্জনের যে মুকুট আছে তা এই আয়োজনের মাধ্যমে একটি গৌরবোজ্জ্বল পালকের সংযোজন ঘটেছে। শরিফুল ইসলাম সরকারের ১৭টি গান যেভাবে আমরা উপভোগ, অনুভব ও উপলব্ধি করেছি সেক্ষেত্রে একটি জিনিসই আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে, প্রতিশ্রুতিশীল একটি প্রতিভাকে পরিচর্যা, অনুপ্রেরণা ও পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া গেলে তিনি তার লক্ষ্য অর্জন করে আমাদেরকে সমৃদ্ধির উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দেবে। আগামী দিনে শরীফুলের মতো যেন আরও প্রতিশ্রুতিশীল প্রতিভার উন্মেষ ঘটে এটাই আমাদের কামনা। 

বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আসলাম বলেন, শরীফুল ইসলামের মতো যারা প্রতিভাবান গীতিকার রয়েছেন, যারা গান নিয়ে কাজ করতে চান তাদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে এ আয়োজনটি। সেজন্য এমন আয়োজন খুবই গুরুত্ব বহন করে। আমরা চেষ্টা করবো নতুন নতুন গীতিকার তৈরি করতে এবং তাদের নিয়ে এমন আয়োজন করতে। তাহলে আমাদের সংগীতাঙ্গন আরও সমৃদ্ধ হবে, আরও এগিয়ে যাবে।

এমএএস