হামার (আমার) বাড়ি পোড়ার চরে। গ্রামের নামের সাথে হামার (আমার) কপালও পোড়া। বাড়ি ভাঙার পর নিঃস্ব হইয়া এখানোত (এখানে) আসি কোনোমতে (কোনরকমে) আশ্রয় নিছি। কিছু দিন আগোত (আগে) বানে (বন্যায়) সব শ্যাষ (শেষ) হইয়া গেইছে। আগেরে ভাঙা বাড়িঘর এলাও (এখনো) ঠিকঠাক হয় নাই। পানি বাড়াতে ফির ভাঙন শুরু হইছে। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের বাসিন্দা আব্দুল রহমান (৭০)।

তিনি বলেন, দুই দিন থাকি (থেকে) ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ছে। সঙ্গে ভাঙন এলা (এখন) হামরা (আমরা) যাই কোনডাই (কোথায়)। হামার (আমার) দুঃখের শ্যাষ (শেষ) নাই। দেহেন কিছু ধান গাড়ছি তাও তলে গেলো। 

ওই চরের বাসিন্দা বাবুল মিয়া বলেন, এখানে ৬০টি পরিবার আছি খাসের জায়গায়। নিজেদের কোনো জায়গা জমি বলতে নাই। আমরা খুব বিপদে আছি। একবার বন্যা হয়ে গেছে, সেই সময় বাড়ি ঘর ভেঙে গেছিল। কোনো রকমে ঘর দুয়ার ঠিক করছি। তার মধ্যে আবারও নদীর পানি বেড়ে গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে ঢুকেছে, সঙ্গে ভাঙছে। এবার কোথায় যে যাব চিন্তায় বাঁচি না। পশ্চিম দিকে খাসের জায়গা মানুষ দখল করে আছে। আমাদের যেতে দিচ্ছি না। এখানে ভাঙলে আর যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নাই আমারগুলার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার একটি চরের নাম পোড়ার চর। সেখানেই রয়েছে ভূমিহীন প্রায় ৮০টি পরিবার। পরিবারগুলো ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটেমাটি হারিয়ে গত ৪-৫ মাস আগে আশ্রয় নিয়েছিল এই পোড়ার চরে। সেখানেও পানির দাপট ও ভাঙন শুরু হয়েছে। 

এখানকার বাসিন্দারা গত বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। সেই ধকল যেতে না যেতেই গত দুদিন থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙন আতঙ্কে দিন অতিবাহিত করছেন তারা। এছাড়া পোড়ার চরে গত দুই দিনে ১০টি পরিবার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের শিকার হয়েছেন।

বন্যার সেই ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি ফলে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। অনেকে কোনো উপায় না পেয়ে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। বর্তমানে চরটিতে প্রায় ৬০টি ভূমিহীন পরিবার বসবাস করছে। 

পোড়ার চরের বুলবুলি নামে এক নারী বলেন, আমার এখানে এক দিকে বন্যা, অন্যদিকে ভাঙন। আমাদের দুঃখের শেষ নেই। একবার তো বন্যা হয়ে গেলো, আবার দেখছি বন্যা আসছে। আমরা যে কোথায় যাব, তার কোনো ঠিকানা নাই।

এরকম ভাঙনের চিত্র শুধু পোড়ার চরে নয়, একই চিত্র যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার রলাকাটা, চর যাত্রাপুরের বানিয়া পাড়া, গোয়ালপুড়ি ও কালির আলগা গ্রামে। এছাড়া তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষদের।

কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, দুদিন থেকে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধির ফলে কিছু ধানক্ষেত তলিয়ে গেছে। পাশাপাশি কয়েকটি গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। দুই দিনে প্রায় ৫০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। এ অবস্থায় আমরা সরকারের কাছে জরুরি ভিত্তিতে দাবি করছি তাদের যেন পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। 

জুয়েল রানা/এসপি