বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে স্বপ্নে রোগ সারানোর ক্ষমতা পেয়েছেন বলে দাবি করে সর্বরোগের চিকিৎসা করছেন আব্দুল মুকিত নামে এক ব্যক্তি। একগুচ্ছ নিম পাতা দিয়ে বাতাস, ঝাড়ফুঁক আর বিভিন্ন দাওয়ার মাধ্যমে ক্যানসারেরও চিকিৎসা করছেন তিনি। ৮ মাস ধরে শনিবার ও মঙ্গলবার রাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকশ মানুষ আসেন তার কাছে। মুকিতের চিকিৎসায় রোগ থেকে মুক্তি ও ভোগান্তি দুই ধরনেরই কথা রয়েছে এলাকায়। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আব্দুল মুকিত (৫৫) বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বলভদ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা। এক মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে তার। বর্তমানে ক্যানসার, প্যারালাইসিস, পাইলস, স্ট্রোক, মাজা ব্যথা, বাত-ব্যথা, জন্ডিস, হাঁপানিসহ সব ধরনের চিকিৎসা দেন তিনি। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার রাতে তার নিজের বাড়ির অদূরে লক্ষ্মীকান্ত মন্ডলের বাড়িতে বসে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন। 

স্থানীয়দের দাবি, চিকিৎসাসেবাকে কেন্দ্র করে ৩৫ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। এই কমিটিতে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ প্রভাবশালীরা রয়েছে। চিকিৎসাসেবা দিয়ে যে টাকা আয় হয়, সেই টাকা তারা ভাগ করে নেন। মুকিত তেমন কিছু পায় না।

শনিবার রাতে কবিরাজের বাড়ি মোরেলগঞ্জ উপজেলার বলভদ্রপুর গ্রামে লক্ষ্মীকান্তের বাড়িতে গিয়ে শতাধিক নারী-পুরুষের ভিড় দেখা যায়। ছোট একটি ঘরে থালার ওপর মোমবাতি জ্বালানো। সেই থালায় ৫-২০ টাকা পর্যন্ত রাখছেন লোকজন। সেই ঘরের পরেই আরেক ঘরে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে নিম-পাতা দিয়ে রোগীদের ঝাড়ফুঁক ও পরামর্শ দিচ্ছেন কবিরাজ আব্দুল মুকিত। বেশির ভাগ রোগীকে পথ্য হিসেবে কালোজিরা, সরিষার তেল ও মধু খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।


 
চিকিৎসার প্রক্রিয়া সম্পর্কে কবিরাজ আব্দুল মুকিত বলেন, আমি খুব অসুস্থ ছিলাম। প্রায় দুই যুগ আগে বিয়ে করলেও কোনো বাচ্চা হতো না আমার। দুই বছর আগে আল্লাহ আমাকে একটি সন্তান দিয়েছেন। বছর খানেক আগে রাতে ঘুমের ঘোরে কেউ একজন এসে আমাকে বলেন, তুই সুস্থ হয়ে যাবি। লাঠি ফেলে দে, তোর কাছে যারা আসবে তারাও সুস্থ হবে। তুই চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু কর। তারপর থেকে আমি নিজেও সুস্থ হয়ে যাই, আর মানুষদেরও চিকিৎসা দেওয়া শুরু করি। রাত ১০টার দিকে এশার নামাজ আদায় করেছেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রাত ১২টায় পড়ব। আর ফজরের নামাজের বিষয়ে বলেন, চিকিৎসা করতে করতে সারা রাত কেটে যায়। ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমাই।

চিকিৎসা পদ্ধতি ও ফি সম্পর্কে মুকিত বলেন, আমি কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নিই না। যার যা ইচ্ছে, সামনে একটা থালা রাখা আছে, সেই থালায় রেখে যায়। এটা দিয়ে এই বাড়ির বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য ব্যয় বহন করা হয়। আমি কখনো এই টাকা ভোগ করি না। সংসার চলে কীভাবে এমন প্রশ্নে তিনি জানান, দিনে দিনমজুরির কাজ করি।

মুকিতের কাছে চিকিৎসা নিতে যাওয়া কচুয়া উপজেলার নদ্রেন্দ্রপুর গ্রামের রিকশাচালক আসাদ মোল্লা বলেন, আমার হাঁটু ফুলে উঠেছিল, অনেক চিকিৎসা করেও যখন ভালো হয়নি, তখন এখানে আসি। এখানে আসার পরে ভালো হয়েছি।

অঞ্জলী রানী নামে এক নারী বলেন, আমার এবং আমার মেয়ের শরীরে সমস্যা ছিল। এখানে এসে ভালো হয়েছি।

স্থানীয় জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মুকিত নিজেই অসুস্থ। আর তার কাছে শত শত লোক আসছে। এটা নিঃসন্দেহে প্রতারণা।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বপন কুমার মুখার্জী বলেন, মুকিত ফকির যে চিকিৎসা দিচ্ছে তা স্পষ্ট অপচিকিৎসা।
 
বনগ্রাম ইউনিয়নের ৬ নং (বলভদ্রপুর) ওয়ার্ডের সদস্য প্রদীপ মজুমদার বলেন, আমরা যতদূর জানি মুকিতের কাছে লোকজন ভালো হয়। কীভাবে সে চিকিৎসা দেয়, তা সে জানে। আমরা অন্য কিছু জানি না।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া এই ধরনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই।

তানজীম আহমেদ/এসপি