বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ছে সারা ঘরে। ভিজে গেছে মশারি-বালিশ-তোশক। কোথাও একটু শুকনো জায়গা নেই। ঘরের টিনের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে পুরো আকাশ। এমন জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন বৃদ্ধ নারায়ণ-মীরা দম্পতি। তাদের বসবাস নোয়াখালী সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের নন্দনপুর গ্রামে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সাল থেকে ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন নারায়ণ-মীরা দম্পতি। ২০২০ সালে অন্যের বাড়িতে রেখে বিয়ে দিয়েছেন বড় মেয়ে স্মৃতি রানীকে। হিন্দু প্রথা অনুযায়ী সব কিছু পালন করতে গিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন নারায়ণ চন্দ্র কুরী। স্থানীয় বাজারে পুরাতন কাপড় সেলাই করেন তিনি। বার বার মানুষের কাছে সাহায্যের হাত বাড়ালেও সাড়া দেয়নি কেউ। নিরুপায় হয়ে কখনো শ্বশুরবাড়ি আবার কখনো অন্যের ঘরে থাকছেন তিনি। একমাত্র ছেলের রোজগারে ওষুধ আর দুমুঠো খাবার যোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। ছেলের বিয়ের সম্বন্ধ আসলেও মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় সব কিছু ভেস্তে যায়।

নারায়ণ চন্দ্র কুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মধ্যরাতে বৃষ্টি হলে ঘুমানো যায় না। বৃষ্টির পানিতে ঘুম ভেঙে যায়। ছেলে-মেয়ে বউসহ সারারাত বসে কাটাই। ঘুমাতে আর পারি না। সব কিছু ভিজে যায়। আমার বয়স হয়েছে। ঠিকমতো কাজ করতে পারি না। ছেলে যা আয় করে তাই দিয়ে দু’বেলা খাবার জোটে। 

তিনি আরও বলেন, বড় মেয়ের বিয়ে দিসি দুই বছর আগে। তাও জামাইকে একবার ঘরে আনতে পারি নাই। নিজেরাই ত থাকতে পারি না। বড় ছেলেটার বিয়ে হচ্ছে না ঘরের জন্য। কেউ মেয়ে দিতে রাজি হয় না। ছোট মেয়েটার বিয়ের জন্য সম্বন্ধ আসে, ঘর নাই দেখে বিয়ে ভেঙে যায়। 

কেউ কথা রাখে না উল্লেখ করে নারায়ণ চন্দ্র কুরী বলেন, আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি। এদিকে ঘরটার অবস্থাও খারাপ। আগের চেয়ারম্যান কথা দিসে, কিন্তু সে কথা রাখে নাই। নতুন চেয়ারম্যান ভোটের সময় বলেছেন, তিনিও কথা রাখেন নাই। 

মীরা রানী সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘরের মধ্যেই রান্নাঘর কিন্তু রান্না করতে পারি না। কারণ চালে টিন নাই। নিজেরা থাকতে পারি না, অতিথি আসে না। ৬ বছর ধরে ভাঙা ঘরে খুব কষ্ট আছি।

প্রতিবেশী শিউলি রানী সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এদের খুব কষ্ট হয়। দিনের বেলায় খেতে পারে না, রাতের বেলায় ঘরে ঘুমাতে পারে না। আমরা কেবল দেখছি। কিন্তু কিছু করার সামর্থ্য আমাদের নেই। যদি থাকতো তাহলে এদের ঘর করে দিতাম। 

এওজবালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ইউপি নির্বাচনের সময় তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। খুব জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরে থাকেন। আমি আশ্বস্ত করেছিলাম সরকারের পক্ষ থেকে হোক বা ব্যক্তিগতভাবে হোক ঘরের ব্যবস্থা করব। কিন্তু সরকারি কোনো সুযোগ এখনো পাওয়া যায়নি। আগামী দিনে যদি কোনো সুযোগ আসে তাহলে আমি তার নাম দেব।

হাসিব আল আমিন/এসপি