খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদুর রহমানসহ দুইজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা  হয়েছে। এর আগে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে আপত্তিকর ও উসকানিমূলক তথ্য প্রচারের অভিযোগ তুলে জাহিদুরকে মারধর করেন হলের শিক্ষার্থীরা। পরে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) কুয়েটের সিকিউরিটি অফিসার মো. সাদেক হোসেন প্রামাণিক নগরীর খানজাহান আলী থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশ ওই মামলায় জাহিদুরকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। বর্তমানে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে ভর্তি রয়েছেন।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ১১ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিরাপত্তা প্রহরীর মাধ্যমে জানতে পারি জাহিদুর রহমানকে একই হলের শিক্ষার্থীরা সরকারবিরোধী আখ্যা দিয়ে মারধর করে প্রভোস্ট রুমে আটকে রেখেছেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মোবাইল ফোন পর্যালোচনা করে জাহিদুর রহমান আরেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ব্যক্তিগত চ্যাটের মাধ্যমে সরকারবিরোধী, মানহানিকর, মিথ্যা এবং আক্রমণাত্মক তথ্য আদান-প্রদান করার তথ্য পাওয়া যায়।

পুলিশ ও কুয়েট সূত্রে জানা গেছে, জাহিদুর কুয়েট আবাসিক হলে মাস দুই আগে ওঠেন। তবে কুয়েটে তার তেমন কোনো বন্ধু ছিল না। বেশিরভাগ সময় মোবাইল ফোন আর ল্যাপটপে সময় কাটাতেন। গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে আপত্তিকর ও উসকানিমূলক তথ্য প্রচারের অভিযোগে হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে মারধর করেন। রাতেই তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ জাহিদুরকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনার পরদিন সোমবার তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন কুয়েটের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাদেক হোসেন প্রামাণিক।

মামলার বাদী সাদেক হোসেন প্রামাণিক বলেন, জাহিদুর টেলিগ্রামে একটি গ্রুপ চালাতেন। টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে আপত্তিকর ও উসকানিমূলক তথ্য প্রচার করেছেন বলে অভিযোগ উঠার পর বিষয়টি জানাজানি হলে হলের উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা রোববার রাতে ড. এমএ রশিদ হলের ১১৭ নম্বর কক্ষ থেকে জাহিদুরের ল্যাপটপ ও মোবাইল আটক করে। শুনেছি শিক্ষার্থীরা তাকে চড়-থাপ্পড়ও দেয়। পরে হলের প্রাধ্যক্ষ, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা এবং আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে হেফাজতে নিই। পরে তাকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে।

কুয়েটের ড. এম এ রশিদ হলের প্রাধ্যক্ষ মো. হামিদুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে হলের ছাত্ররা জানতে পারেন ওই শিক্ষর্থী দেশবিরোধী বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে সংযুক্ত। রোববার রাতে আমরা তাকে হেফাজতে নিয়ে কিছু কথাবার্তা বলেছি। সে এসব বিষয় স্বীকার করেছে। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পর মনে করেছি যে বিষয়টা পুলিশ প্রশাসনকে জানানো উচিত। পরে পুলিশ এসে বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে তাকে নিয়ে গেছে।

খানজাহান আলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন খান বলেন, কুয়েট শিক্ষার্থী জাহিদুর রহমান (২২) ও অন্য জায়গার একজন শিক্ষর্থী রেজওয়ান স্যামের (২১) বিরুদ্ধে সোমবার বিকেলে কুয়েটের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাদেক হোসেন মামলা করেন। জাহিদুরকে কুয়েট প্রশাসন খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে। ভর্তি অবস্থায় সোমবার ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বর্তমানে সে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

মোহাম্মদ মিলন/আরএআর