দুই বছর পর যশোরের চৌগাছায় শুরু হয়েছে ১০ দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী পীর বলুহ দেওয়ানের মেলা। মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) এ মেলা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। চলবে আগামী সাতদিন। মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে মেলায় আসতে শুরু করেছে দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা। শুধুমাত্র ব্যবসায়ীরা নয়, দূর-দুরাম্ত থেকে অনেক দর্শনার্থীও আসেন এ মেলা দেখতে।

প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার পীর বলুহ দেওয়ান (র.)-এর রওজা শরিফকে ঘিরে যশোরের চৌগাছা উপজেলার হাজরাখানা গ্রামে কপোতাক্ষ নদীর তীরে এ মেলা বসে। তবে গত দুই বছর করোনার কারণে এ মেলা হয়নি। এ বছর ১৭টি শর্তে এ মেলার অনুমোদন দিয়েছে জেলা প্রশাসন। 

এ বছর মেলায় আসবাবপত্র থেকে শুরু করে কসমেটিকস্, বাচ্চাদের খেলনা, খাবারের দোকানসহ বিভিন্নরক রকম প্রসাধনী এবং বিনোদনের দোকান বসেছে।

কথিত আছে, পীর বলুহ দেওয়ান অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল রহস্যজালে ঘেরা। তিনি উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের ছুটি বিশ্বাসের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তবে জন্মকাল সম্পর্কে আজও কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।

ভক্তদের অনুমান, তিনি তিনশ’ থেকে চারশ’ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেন। তার সম্পর্কে স্থানীয়দের মাঝে রয়েছে নানা অলৌকিক কাহিনী। জনশ্রুতি রয়েছে, যখন তার বয়স ১০ থেকে ১২ বছর তখন বাবার অনুমতি নিয়ে বিদ্যান বিলে গরু চরাতে যান। গরু দিয়ে ক্ষেত নষ্ট করার অভিযোগে মালিক গরু ধরতে গেলে তিনি গরুগুলোকে বক বানিয়ে গাছে বসিয়ে রাখেন।

বাবার মৃত্যুর পর তিনি উপজেলার হাজরাখানা গ্রামে মামার বাড়িতে থেকে অন্যের বাড়ি দিনমজুর খাটতেন। একদিন তিনি সর্ষে মাড়াই করতে মাঠে গিয়ে সর্ষের গাদায় আগুন ধরিয়ে দেন। সংবাদ শুনে গৃহস্থ মাঠে গিয়ে দেখেন, সর্ষের গাদায় আগুন জ্বলছে। তখন গৃহস্থ রাগান্বিত হলে তিনি হেসে বলেন, ‘ছাই উড়িয়ে দেখেন সর্ষে পোড়েনি’।

এ অঞ্চলে প্রচলিত আছে, একদিন তার মামি খেজুর রসের চুলায় জ্বাল দিতে বললে তিনি জ্বালানির পরিবর্তে চুলার ভেতর পা ঢুকিয়ে দেন, চুলায় আগুন জ্বলতে থাকে। কিন্তু তার পায়ের কোনো ক্ষতি হয়নি।

তার মৃত্যুর পর প্রতি বছর ভাদ্রমাসের শেষ মঙ্গলবার হাজরাখানা গ্রামে অবস্থিত তার রওজা শরিফে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, নারকেল ও নগদ টাকাসহ নানা প্রকার জিনিস দিয়ে মানত শোধ করা হয়ে থাকে। কালের পরিক্রমায় বহু বছর ধরে চলে আসছে এই প্রথা।

মাজারের এক ভক্ত মামুন খান বলেন, আমরা প্রতি বছর এ মেলায় আসি। পীর বলু'র সাধনা করি। তিনি অনেক অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তার আশ্চর্যজনক অনেক কাজের ইতিহাস রয়েছে।

মেলায় মাদারীপুর থেকে আসা প্লাস্টিক ফুল ব্যবসায়ী আল-আমিন বলেন, পর পর দুই বছর পর এ মেলা হচ্ছে। তবে এবার এ মেলার অনুমতি নিয়ে অনেক সংশয় ছিল। হবে, কি হবে না এমন বিষয় নিয়ে দূর-দুরান্তের অনেক ব্যবসায়ী এবার আসতে পারেনি।

মেলায় দায়িত্বরত পুলিশ উপ-পরিদর্শক ওয়াহিদুল হক খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেলার সার্বিক পরিস্থিতি শৃঙ্খলভাবে রয়েছে। পুলিশ সারাক্ষণ টহল ও নজরদারি দিচ্ছে। কোনো অপ্রতিকর ঘটনা ঘটানোর সুযোগ নাই।

মেলার সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে মেলা কমিটির আহ্বায়ক শাহীনুর রহমান শাহীনের কাছে বক্তব্য চাইলে তিনি দিতে অনিহা প্রকাশ করেন। 

মেলার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চৌগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ। তবে এ বিষয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিতে পারবেন না বলে জানান।

এ্যান্টনি দাস অপু/এমএএস