ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার এবং দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ এখন অপরিহার্য দাবি করে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, একদলীয় শাসন ব্যবস্থার অধীনে দিনের ভোট রাতে কিংবা ফ্যাসিবাদী কায়দায় ব্যক্তি প্রয়োজনের ভোট আর কখনো এ দেশে হতে দেওয়া হবে না। 

তিনি বলেছেন, দেশে আজ গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার নেই। দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এখন ঐক্যবদ্ধ হবার সময় এসেছে। সবার সম্মিলিত আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে রংপুর পর্যটন মোটেলের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মিডিয়া সেলের উদ্যোগে ‘জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র গঠনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনোত্তর একটি জাতীয় সরকার এবং দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ অপরিহার্য’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মতবিনিময় সভায় দলটির অঙ্গসংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বিশিষ্ট নাগরিক ও সচেতন সমাজের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

সভায় শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন প্রয়োজন। এ কারণে তরুণরা রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষে আওয়াজ তুলেছে। এখান থেকে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। আজ রাষ্ট্রের এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি-অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার চর্চা হয় না। রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে অকেজো করে ফেলা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে রাজনীতি, অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, নির্বাচন ব্যবস্থা তথা গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে। মানবাধিকারের মূলনীতিগুলো আজ মৃতপ্রায়।

মতবিনিময় সভায় আলোচ্য বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী। এতে বলা হয়, বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ, জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ ব্যক্তিদের নিয়ে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা এখন সময়ের দাবি। পৃথিবীর উন্নত ও অনুসরণযোগ্য অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার প্রচলন রয়েছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার করে এসে জনগণ আর রাজনৈতিক হানাহানি দেখতে চায় না, ভবিষ্যতমুখী এক নতুন ধারার সামাজিক চুক্তি এবং জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায় তারা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি কার্যকরী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাষ্ট্র রূপান্তরমূলক সেই বৃহৎ কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে কঠিন দায়িত্ব হাতে নিয়েছে।

মতবিনিময় সভায় ব্যারিস্টার মীর হেলালের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ, সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আকতার, সুজন রংপুর জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন, অধ্যাপক জাকির হোসেন, শিক্ষাবিদ ড. ফেরদৌস রহমান, অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিন, চিকিৎসক তাজুল ইসলাম, সাংবাদিক একেএম মঈনুল হক, গবেষক ড. রোকনুজ্জামান, অ্যাডভোকেট রেবেকা সুলতানা ফেন্সি, সাংবাদিক রেজাউল করিম মানিক প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ-উন-নবী ডনসহ রংপুর বিভাগের আট জেলা থেকে আগত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট নাগরিক ও সচেতন সমাজের প্রতিনিধিরা এতে উপস্থিত ছিলেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস