ফজরের নামাজের পর পরই ছুইটা আইছি। এসেই সিরিয়াল নিছি। তা নাহলে পিছনে পড়ে যাব, চাল কিনতে পারমু না। চাল কিনতে না পারলে বেশি দামে কিনতে হবে। রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া চৌরাস্তা বাজারে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন খোলা বাজারে ৩০ টাকা কেজি চাল কিনতে আসা রহিমা, আয়েশা ও আফরোজা।

গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ টাকা দরে খোলাবাজারে ৫ কেজি চাল বিক্রি শুরু করে সরকার। উদ্বোধনের পরের দিন থেকেই সাপ্তাহিক ছুটি বাদে ৫ দিন জেলা ও উপজেলায় চাল বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে দেখা যায় দীর্ঘ লাইন। আবার কাউকে চাল কিনতে না পেরে বাড়ি ফিরতেও দেখা গেছে।  

খোলাবাজারে চাল বিক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ চাল কিনতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের মধ্যে কেউ দিনমজুর, কেউ ভ্যানচালক, কেউ পাথর-শ্রমিক আবার কেউ চা-শ্রমিক। প্রথম যারা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তারা চাল তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছেন।

চাল কিনতে আসা ৬০ বছর বয়সী আসির উদ্দিন বলেন, ফজরের নামাজ পড়েই ছুটে এসেছি। একজনের মাধ্যমে বাজারের ব্যাগ দিয়ে সিরিয়াল দিয়েছি। খুব কষ্ট হয় লাইনে দাঁড়িয়ে চাল তুলতে। একই কথা বলেন আব্দুল আজিজ, আকবর আলী, নেসার উদ্দিনসহ অনেকে।

কথা হয় আফরোজা, বিলকিস, গুলজান, আয়েশাসহ কয়েকজন নারীর সঙ্গে। তারা বলেন, ভোর ৫টার আগে ঘুম ভাঙে। ঘর ঝাড়ু দিয়েই চলে আসি ৫ কেজি চাল তুলতে। ৩-৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে চাল নিতে পারছি। চালের দাম অল্প হওয়ায় কষ্ট হলেও লাইনে দাঁড়িয়ে চাল কিনছি।

লাইনে দাঁড়িয়েও চাল কিনতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে অনেকের। তারা জানান, লাইনে দাঁড়িয়েও আমরা চাল কিনতে পারছি না। ‘আজকের মতো চাল শেষ’ বলে ফিরিয়ে দেয় ডিলাররা। আবার স্বজনপ্রীতিও হচ্ছে। কেউ লাইনে না দাঁড়িয়েও চাল কিনে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ বলছেন, চাল বিক্রয়ের স্থানগুলো কাছাকাছি করা হোক। ৫ কেজি চালের দাম ১৫০ টাকা। আর ভ্যান-অটো ভাড়া দিতেই চলে যায় ৫০/৭০ টাকা। ঘুরে ফিরে এক।

উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক রুবেল আলম জানান, প্রতিদিন দুজন ডিলারের মাধ্যমে তেঁতুলিয়া ও শালবাগানে মোট ৪ মেট্রিক টন চাল ৮০০ পরিবার কিনতে পারছে। বরাদ্দ কম, তাই যারা আগে এসে লাইনে দাঁড়াতে পারছেন, তারাই নিতে পারছেন।

জানা গেছে, জেলার পাঁচটি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভাসহ ৪৩টি ইউনিয়নের ১ লাখ ২৬ হাজার নিম্ন আয়ের মানুষ স্বল্পমূল্যে চাল কিনতে পারছেন। সরকারি ছুটি বাদে প্রতিদিন জেলার ১৮ জন ডিলারের মাধ্যমে ৩০ মেট্রিক টন চাল বিক্রয় করা হচ্ছে। প্রতিদিন ৬ হাজার মানুষ এই সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়াও টিসিবি ফ্যামিলির কার্ডধারীরা ওএমএসের ডিলারদের কাছ থেকে দুই দফায় ১০ কেজি চাল কিনছেন। এছাড়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৫১ হাজার তিনজন নিবন্ধিত ভোক্তা ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে একবার ৩০ কেজি করে ৩ মাস চাল কিনবেন।

এসপি