পাবনার বেড়া উপজেলার কাজিরহাট-আরিচা নৌরুটে এখন যানবাহনের অপেক্ষায় অলস বসে আছে ফেরি। টার্মিনাল ও সড়ক সবখানেই যানবাহন শূন্য, একদম ফাঁকা। ফেরি বাড়লেও বাড়েনি যানবাহন। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটেই সময় পার করছেন ফেরিচালকরা।

জানা গেছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে কাজিরহাট ফেরিঘাটে পণ্যবাহী পরিবহনের দীর্ঘ সারি থাকত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো যানবাহনগুলোকে। ভোগান্তির শেষ ছিল না। কিন্তু এখন পুরো ঘাট এলাকা যানবাহনশূন্য। পারাপারের অপেক্ষায় নেই কোনো পণ্যবাহী ট্রাক। হঠাৎ দুই একটি বাস ও ট্রাক এসেই ফেরিতে ওঠে যাচ্ছে।

বর্তমানে এই রুটে পাঁচটি ফেরি চলছে। সেগুলো হলো- বেগম সুফিয়া কামাল, বেগম রোকেয়া, ফেরি ক্যামেলিয়া, ফেরি কুঞ্জলতা ও শাহ আলী। এদের মধ্যে যাত্রী ও যানবাহন না হওয়ায় বেগম রোকেয়া ফেরিটি বন্ধ রাখা হয়েছে।

পাবনার ঈশ্বরদী থেকে ঢাকা যাচ্ছেন পোশাকশ্রমিক মোছা. নুরুন্নাহার। তিনি বলেন, পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসছিলাম। ছুটি শেষে সকাল ১০টার মধ্যে অফিসে পৌঁছানোর জন্য খুব ভোরে রওনা হই। কিন্তু ফেরিঘাটে এসে দেখি একদম ফাঁকা। ২-৩ ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকার পরও ফেরিতে পরিবহন ভর্তি না হওয়ায় ঘাটে বসে আছি। আগে বসে থাকতে হয়েছে ফেরি সংকটে, আর এখন গাড়ি সংকটে।

লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে আসা ট্রাকচালক শাহ মোহাম্মদ আমানত বলেন, আগে এই ঘাটে এসে ফেরি সংকটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। ঘাটে ৩০০-৪০০ পরিবহনের যানজট লেগেই থাকত। যার জন্য ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। কিন্তু এখন ঘাটে ফেরি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সকাল ৮টার দিকে ঘাটে আসছি, এখন বেলা ১১টা গড়িয়ে যাচ্ছে। তাও একটি ফেরি ভর্তি হয়নি।

কাজিরহাট ফেরিঘাটের টার্মিনাল সুপারিটেনডেন্ট গোলাম হাসনাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে ঘাটে পাঁচটি ফেরি সংযুক্ত রয়েছে। প্রতিদিন ১৯০-২০০টি পরিবহন পারাপার করা হচ্ছে। বর্তমানে কিংস ও রাজদূত নামে দুটি দূরপাল্লার বাস পারাপার করা হয়। যেগুলো ফেরি রয়েছে প্রতিদিন সাড়ে ৩০০ পরিবহন পারাপার করা সম্ভব। বর্তমানে ঘাটে কোনো ট্রাক টার্মিনাল নেই। একটি টার্মিনাল বানানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা অঞ্চলের ডিজিএম শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, আরিচা-কাজিরহাট রুটে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য শিমুলিয়া ঘাট থেকে বড় দুটি ফেরি ঘাটে যুক্ত করা হয়েছে। এখন অনেকটাই যাত্রী ও যানবাহনশূন্য থাকায় অলস বসে থাকে। ফেরিগুলোতে যানবাহন বাড়ানোর জন্য আমরা এই রুটে বেশি সংখ্যক দূরপাল্লার বাস পারাপার করা যায় কি না সে বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কাজিরহাট ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. ফয়সাল মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘাটে পর্যাপ্ত ফেরি রয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় পরিবহন ও যাত্রী আসছে না। বর্তমানে সবচেয়ে বড় ফেরিটি ঘাটে বসিয়ে রাখা হয়েছে। পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের পাশাপাশি দূরপাল্লার বাস পারাপার করা গেলে হয়ত ঘাট ঝাঁকজমকপূর্ণ হতো। বাস পারাপারের জন্য মালিক সমিতির সঙ্গে কথা চলছে।

রাকিব হাসনাত/এসপি