নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব নারী দলে এবারই প্রথম। এর আগে ২০১৬ সালে ভারতের শিলিগুড়িতে ভারতের বিপক্ষে খেলে হেরেছিল বাংলাদেশ। এবার নেপালের কাঠমুন্ডুতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

ইতিহাস গড়া এই খেলায় অংশগ্রহণ করেছে উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের দুই নারী ফুটবলার স্বপ্না রানী ও সোহাগী কিসকো। তাদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ চাম্পিয়ান হওয়ায় পুরো জেলাজুড়ে আনন্দের বন্যা বইছে। খেলা শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। স্বপ্না আর সোহাগীকে নিয়ে গর্বিত ঠাকুরগাঁওবাসী। 

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার হোসেনগাঁও ইউনিয়নের রাঙ্গাটুঙ্গি গ্রামের গুলজার কিসকোর মেয়ে সোহাগী কিসকো ও একই ইউনিয়নের শিয়ালডাঙ্গী গ্রামের নীরেন চন্দ্র রায়ের মেয়ে স্বপ্না রাণী। তারা দুজনেই রাঙ্গাটুঙ্গি ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমির খেলোয়াড়। 

আরও পড়ুন : ইতিহাস গড়ে দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

সোহাগী কিসকোর বাবা গুলজার কিসকো বলেন, খুব আনন্দ লাগছে। আজকে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল জয়ী হয়েছে। এতে আমার মেয়ে খেলেছে। আমরা সবাই খুব খুশি। আমরা মিষ্টি মুখ করেছি সকলে। আমার মেয়ের জন্য সকলে দোয়া করবেন। সে যাতে দেশের জন্য আরও ভালো কিছু করতে পারে।  

উপজেলার হোসেনগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বপ্না ও সোহাগী  দুজনে আমার ইউনিয়নের। তারা দুজনে নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছে। আজকে তাদের জন্য আমরা গর্বিত। তারা খেলায় অংশগ্রহণ করেছে, নারী ফুটবল দল চাম্পিয়ন হয়েছে। আমরা এলাকা ও পুরো জেলাবাসী অনেক আনন্দিত৷ আমরা তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি। 

রাঙ্গাটুঙ্গি ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমির কর্ণধার তাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে আমরা দেশের খেলাধুলা নিয়ে অনেক হতাশায় আছি। সেখানে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়া আমাদের জন্য গর্বের। আমি আমাদের একাডেমির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ টিমকে অভিনন্দন জানাই। এ বিজয় আমাদের জন্য অনেক গর্বের। সেই সঙ্গে ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের জন্য একটু বেশি গর্বের। কারণ আজকে আমাদের জেলার স্বপ্না ও সোহাগী দুইজন খেলোয়াড় খেলায় অংশগ্রহণ করেছেন। আমরা তাদের দুইজনকে নিয়ে গর্ববোধ করছি। আমি আশা করছি তারা আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের মান আরও সম্মুন্নত রাখবে। 

স্বপ্না ও সোহাগীর ফুটবলের পথচলার যাত্রার সময় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে তাদের বাড়ি। তাদের পারিবারিক অবস্থা অনেক গরিব। দিন আনে দিন খায়। আমি চিন্তা করলাম তাদের নিয়ে একটা ফুটবল একাডেমি করি। তারপর তাদের পরিবারের কাছে প্রস্তাব দেই। তারা সকলে বিষয়টিতে সম্মতি দেয়। তারপর অনেক পরিশ্রমের ফলে আজ তারা দেশের হয়ে বাইরে খেলছে। শুরুতে অনেকে নানা কটু মন্তব্য করছেন, তবে আমরা পিছিয়ে যাইনি। তার বাস্তব প্রমাণ আজ পুরো বিশ্ব দেখেছে। আমরা আসা রাখছি আমাদের একাডেমি থেকে আরও স্বপ্না ও সোহাগী তৈরি হবে। 

স্বপ্না ও সোহাগীকে সাধুবাদ জানিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথমত বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে অভিনন্দন জানাই। সেই সঙ্গে যেহেতু আমাদের দুজন খেলোয়াড় প্রতিনিধিত্ব করেছে, এতে আমরা গর্বিত। আমরা আশা করছি যেভাবে আমাদের নারী ফুটবলাররা এগিয়ে যাচ্ছে। সামনের দিনে আমাদের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে। 

এম এ সামাদ/আরএআর