রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে নিজের মাকে ভর্তি করাতে গিয়ে ‘বকশিশ’ সিন্ডিকেট চক্রের হয়রানির শিকার হওয়া চিকিৎসকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় হাসপাতালের দুই কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত দুই কর্মচারী মাসুদ ও ঝর্না বেগমকে বরখাস্ত করা হয়। এছাড়াও হয়রানির নেপথ্যে আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা জানতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন হাসপাতালের পরিচালক।

হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হরিপদ সরকারকে প্রধান করে গঠন করা তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী এবং ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. আবুল হাসান। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের পরিচালক ডা. শরীফুল হাসান জানান, হয়রানির শিকার চিকিৎসকের অভিযোগের ভিত্তিতে দুজন কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে বকশিশ চাওয়ার ঘটনা এবং রোগী হয়রানি প্রসঙ্গে রমেক হাসপাতালের পরিচালক বরাবর গত ১৮ সেপ্টেম্বর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন হাসপাতালের অর্থোসার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট এবিএম রাশেদুল আমীর। অসুস্থ মাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে গিয়ে বকশিশ সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে হয়রানির শিকার হন তিনি ও তার স্বজনরা।

রাশেদুল আমীর অভিযোগ করেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর তার মা হৃদরোগে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি করাতে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন স্বজনরা। জরুরি বিভাগে ভর্তির জন্য ২৫০ টাকা দাবি করা হয়। পরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মা পরিচয় জানতে পেরে তারা ৫০ টাকা ভর্তি বাবদ নেন। যদিও হাসপাতালে নির্ধারিত ভর্তি ফি ২৫ টাকা এবং সরকারি কর্মকর্তার মা এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসাবে ভর্তি ফি না নেওয়ার কথা।

তিনি বলেন, ভর্তির পর আমার অসুস্থ মাকে সিসিইউতে নেওয়া হলে সেখানে জরুরি বিভাগে কর্মরত দুজন জোরপূর্বক আমার ব্যক্তিগত সহকারীর কাছ থেকে ২০০ টাকা বকশিশ নেন। এ সময় তাদেরকে আমার নাম পরিচয় এবং রোগী সম্পর্কে জানানো হলে তারা বলে ‘যে স্যারের মা হোক, টাকা দিতে হবে’। পরবর্তীতে আমি রাতে আসার পর মায়ের শয্যা পাশে অবস্থানকালে সিসিইউতে কর্মরত ওয়ার্ড বয় পরিচয়ধারী মাসুদ আমার কাছে সরাসরি টাকা দাবি করে। এ সময় আমি সেই কথাবার্তার কিছু মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করি।

রাশেদুল আমীর বলেন, এই ঘটনা আমার কাছে অত্যন্ত মানসিক পীড়াদায়ক এবং অপমানকর। যে প্রতিষ্ঠানে আমি সেবা দিয়ে যাচ্ছি, সেখানে আমি হয়রানির শিকার হচ্ছি তা সত্যিই দুঃখজনক। আমি নিজে হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা হয়েও যদি হয়রানির শিকার হই, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা তো সহজেই অনুমেয়।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর