বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) কাছে প্রায় ৫৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় করপোরেশন এলাকার সড়ক বাতি ও পানির লাইনের বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন করছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) বরিশাল।

গত রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা থেকে এই অভিযান শুরু করে নগরীর সচল সড়কের বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে ওজোপাডিকো বরিশাল বিভাগ।

যদিও সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হয়েছে, বকেয়া বিল গ্রহণের তিনদিনের ব্যবধানে সড়ক বাতির এবং পানি সরবারহের বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এমনকি পূর্বে অবহিত করা ছাড়াই।

বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ভুতূরে গলিতে পরিণত হয়েছে। বাসিন্দারা রাত্রিকালীন চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। সিটি করপোরেশন থেকে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

ওজোপাডিকো লিমিটেড বরিশালের পরিচালনা ও সংরক্ষণ সার্কেলের সহকারী প্রকৌশলী নুরুল  ইসলাম বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, কমপক্ষে ১০ বছর ধরে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে না সিটি করপোরেশন। এতে করে বৃহৎ একটি অঙ্ক দাঁড়িয়েছে। সেই টাকা উত্তোলন করতে না পেরে আমরাও রয়েছি মন্ত্রণালয়ের কাছে চাপের মুখে। অবশেষে সিটি করপোরেশনের সড়ক বাতির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান শুরু হয়েছে। রোববার থেকে শুরু হয়ে অভিযান চলছে।

তিনি বলেন, ধরুন একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঁচ লাখ টাকা পাব, তারা যদি দশ হাজার টাকা পরিশোধ করে তাহলে তা কেমনে মেনে নেওয়া যায়? সরকারের কাছে আমাদেরও তো জবাবদিহিতা দিতে হয়। আমরাও তো সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।

পরিচালনা ও সংরক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এটিএম তারিকুল ইসলাম বলেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এটিএম তারিকুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশনের কাছে মোট ৫৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। এরমধ্যে ৭৮ লাখ পরিশোধ করেছে সিটি করপোরেশন। আমরা অভিযান চালিয়ে ৫৮টি লাইনের মধ্যে গতকাল ১৫টি বিচ্ছিন্ন করি। আর সিটি করপোরেশন আজ সবগুলো লাইন বন্ধ রেখেছে। তবে আমরা কোন পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করিনি।
তিনি বলেন, পাওনা পরিশোধে অসংখ্যবার তাদেরকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু  সিটি করপোরেশন থেকে আশানুরুপ কোনো সাড়া দেওয়া হয়নি। সর্বশেষ পরিশোধের তারিখ ছিল ১৮ সেপ্টেম্বর। কিন্তু নির্ধারিত সময়েও তারা পরিশোধ করেনি। ফলে অভিযান চালিয়ে সড়ক লাইন বিচ্ছিন্ন করতে হচ্ছে।

এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিভিন্ন সড়কের লাইন বিচ্ছিন্ন করছি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে। আর সিটি করপোরেশন তাদের নিজস্ব ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে সেই বিচ্ছিন্ন লাইন যুক্ত করে আবারো বাতি জালাচ্ছে। এভাবে করলে সরকারি এই টাকা উত্তোলনের কোনো উপায় দেখছি না।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের ৭৮ লাখ টাকা গ্রহণ করে ওজোপাডিকো। আর ১৮ তারিখ তারা নগরীর সকল সড়কের বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেন। কেন তারা এই কাজটি করলো এবং কার অনুমতি নিয়ে কাজ করলো তা বলতে পারছি না। আমাদেরকে কোনো কিছুই জানায়নি। হঠাৎ করে তারা সড়ক বাতির এবং পানি সরবারহের বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছন্ন করে দিয়েছে। আজ পর্যন্ত নগরীর সকল সড়ক ও পানির লাইনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

বিএম কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা কলেজ ছাত্র ইমরান জানান, তিনদিন ধরে সড়কে রোড লাইট জ্বলছে না। আর সিটি করপোরেশনের পানির লাইনেও পানি আসছে না। আমরা খুব ভোগান্তিতে রয়েছি। চলাচল করতে কষ্ট হয়। কি কারণে এমন হচ্ছে তা জানি না।

বাংলা বাজার এলাকার আরেক বাসিন্দা শোভন বলেন, আমরা বুঝেছি বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সড়ক বাতি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এখন শুনছি সিটি করপোরেশন বকেয়া বিল করেছে। বকেয়া পরিশোধ করা সিটি করপোরেশনের উচিত। বিল পরিশোধ করতে পারে না তারা কি পরিষদ চালায় বলে প্রশ্ন তোলেন এই বাসিন্দা।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএএস