পোড়া পানের বরজে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে প্রায় ৪০ বিঘা জমির পানের বরজ আগুনে পুড়ে গেছে। রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উপজেলার কাঁপাশাটিয়া ইউনিয়নের শিতলী ও মান্দারতলা মাঠে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে এলাকাবাসী এবং ঝিনাইদহ ও হরিণাকুণ্ডু ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে ৩৫ জন কৃষক নিঃস্ব হয়েছেন।

শীতলি গ্রামের পানচাষি মো. শখের আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক বছর হলো এক বিঘা জমি লিজ নিয়ে পানের বরজ করেছি। পানও ভালোই হয়েছিল। ভেবেছিলাম এই পান বিক্রির টাকা দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিব, নিজের জন্য একটা ঘর নির্মাণ করব। আমার সেই স্বপ্ন, আশা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এখন আমি কীভাবে আমার পরিবারের স্বপ্নগুলো পূরণ করবো। কীভাবে আমার মেয়েকে বিয়ে দিব। সর্বনাশা আগুনে আমার সব শেষ করে দিলো।  

মান্দারতলা গ্রামের পানচাষি আশাদুল বলেন, ১০ শতক জমির পান বিক্রি করেই আমার সংসার চলতো। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচও এখান থেকেই আসতো। হঠাৎ আগুনে পুড়ে গেছে আমার পানের বরজ। এখন আমার কিছুই রইলো না। আমি পথে বসে গেলাম। 

শীতলি গ্রামের মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, তার নিজের ১৫ কাঠা জমি রয়েছে। নতুন করে ১০ কাঠা জমি লিজ নিয়েছেন। সেখানে তিনি মোট এক বিঘা ৫ কাঠা জমিতে পানের বরজ করেছিলেন। পানের ফলনও ভালো হয়েছিল। কিন্তু আগুনে তার পান বরজের কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। শুধু পড়ে আছে ছাইয়ের স্তূপ ও পোড়া খুঁটি। 

তিনি বলেন, পানের বরজ ঘেরার সময় এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলাম। পান বিক্রি করে এ বছর ঋণ পরিশোধ করে ছেলেকে ভালো কলেজে লেখাপড়া করোনার আশা ছিল। সব শেষ হয়ে গেল। 

কাঁপাশাটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শরাফত হোসেন ঝন্টু ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোববার বিকেলে ইউনিয়রেন শীতলি গ্রামের মাঠে অজানা আগুনে কৃষকের প্রায় ৪০ বিঘা জমির পানের বরজ পুড়ে গেছে। আমরা প্রাথমিকভাবে ৩০ থেকে ৩৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা পেয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে থেকে তাদের তালিকা করে অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করবো।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাফিজ হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এখানে ৪০ থেকে ৫০ বিঘার মতো পানের বরজ পুড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। 

হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অজানা আগুনে শীতলি ও মান্দারতলা মাঠের ৪০ থেকে ৫০ বিঘা জমির পানের বরজ পুড়ে গেছে। একটি পান গাছও অবশিষ্ট নেই। আগুনে আনুমানিক ৪-৫ কোটি টাকার মত ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই প্রান্তিক কৃষক। তারা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে পান চাষ করেছিলেন। তিনি সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার দাবি জানান। 

আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরএআর