বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেছেন, ওজোপাডিকো পানির বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছে। এখনতো রাস্তায় আমাদের চেহারা দেখাতে লজ্জা লাগছে। আমি জনগণের প্রতিনিধি, আমিতো এমন কোনো কাজ করবো না যাতে জনগণের ভোগান্তি হয়

বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে নগরীর কালীবাড়ি রোডস্থ সেরনিয়াবাত ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এসব কথা বলেন। 

মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, এক বছর পরেই নির্বাচন। আমি মনে করছি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ওজোপাডিকো নগরীর সড়ক ও পানির বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করেছে। বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন হলে নগরবাসী ভোগান্তিতে পড়বে। এতে করে আওয়ামী লীগ সরকারের বদনাম হবে। সেটি করতেই তারা এই কাজ করেছেন।

তিনি বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের চেয়ে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আরও অনেক সিটি করপোরেশন শক্তিশালী রয়েছে। তাদের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আমাদের চেয়েও বেশি। কিন্তু তাদের সড়ক ও পানির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেনি ওজোপাডিকো। আমাকে কোনো দিক থেকে ঘায়েল করতে না পেরে এই স্থানটি খুঁজে বের করেছে।

মেয়র জানান, সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের সময়ে ২০ কোটি ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার ১৫ টাকা বকেয়া ছিল। তিনি এক টাকাও পরিশোধ করেননি। মেয়র আহসান হাবিব কামালের আমলে বকেয়া ছিল ২১ কোটি ৭৪ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৯ টাকা। এর মধ্যে এক কোটি ৩৩ লাখ ২৮ হাজার ১২২ টাকা পরিশোধ করেছে। আমার আমলে ১৫ কোটি ৮ লাখ ৪৮ হাজার ১৯৫ টাকা বকেয়া। এর মধ্যে ১ কোটি ৭৩ লাখ ৭০ হাজার ২০৭ টাকা পরিশোধ করেছি। একটি বিষয় লক্ষণীয়- বিল পরিশোধ করছি নিয়মিত, তারপরও আমার বিদ্যুৎ লাইন কাটা হচ্ছে।

সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, বকেয়া বিলের কারণে দরকার হলে নগর ভবনের লাইন কেটে দিত। কিন্তু নগরবাসীর ভোগান্তি সৃষ্টি করে সড়ক বাতির লাইন ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া উচিত হয়নি।

তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনে সরকারি অনুদান থাকলে কথা ছিল। আপনাদের বুঝতে হবে, স্থানীয় ফান্ডের টাকা দিয়ে ৫ বছরের গ্যারান্টি সহকারে রাস্তা করছি, কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বকেয়া নেই। সিটি করপোরেশনে ৬৬ কোটি টাকারও বেশি উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। প্রথমে তারা আমাদের বলেছে, বিদ্যুতের লাইন কাটেনি- খুলনা থেকে এসে কেটেছে। এখন আপনাদের (সাংবাদিক) কাছে বলেছে লাইন কেটেছে। নগরবাসীর কাছে আমি দায়বদ্ধ, বিধায় আজকে সকলকে ডেকে (গণমাধ্যম) এই কথাগুলো বলতে হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বক্তব্য পাওয়া যায় না- এমন অভিযোগের জবাবে মেয়র বলেন, কর্মকর্তাদের আমিই বলেছি বক্তব্য না দিতে। কারণ এসব বিষয়ে সকলে তো জানে না। কে কী বলবে, এর চেয়ে সব তথ্য নিয়ে আমিই আপনাদের সামনে কথা বলছি।  

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর, প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু, অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন প্রমুখ। 

এ বিষয়ে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) বরিশাল বিভাগের পরিচালনা ও সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে জানান, সিটি করপোরেশনের কাছে ১১২টি হিসেবের অনুকূলে মোট ৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ১৬ হাজার ৯৪৩ টাকা পাওনা রয়েছে। আমরা তাদের বারবার নোটিশ দিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে লাইন বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য হয়েছি।

তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন ৫৮টি সড়ক বাতির লাইন ও পানির বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করার দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে আমরা বিচ্ছিন্ন করেছি ১৫টি। বাকিগুলো তারা বন্ধ করেছেন। কেন করেছেন তা জানি না।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে এসে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ বিদ্যুৎ বিল প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, এখন বিদ্যুৎ বিল দেওয়াই লাগবে—আমি বলেছি, তাহলে আপনারা আপনাদের লাইন কেটে নিয়ে যান। বিদ্যুৎ বিল দিতে গেলেতো আমি বেতন দিতে পারব না। করপোরেশনতো লোকাল ফান্ডের টাকা দিয়ে চালাচ্ছি।

তার লাইভের তিন দিনের ব্যবধানে ১৮ সেপ্টেম্বর সড়কের বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে ওজোপাডিকো। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর