ভরা মৌসুমেও খুলনার বাজারগুলোতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। গত মৌসুমের এই সময়ে ইলিশের দাম কম থাকলেও এবার চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। ফলে সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে রয়েছে ইলিশ। 

খুলনার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত জুলাই থেকে ইলিশ ধরা শুরু হলেও বাজারে ইলিশের দাম কমছে না। বাজারে ইলিশ দেখলেই সাধারণ ক্রেতারা জড়ো হন। তবে দাম শুনেই বাড়ি ফিরতে হয় তাদের।

খুলনার খালিশপুর বাজারে ১৫০-২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা। ২০০-৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৪৫০ টাকা, ৪০০-৪৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৫০০-৫৫০ টাকা কেজি, ৫০০-৫৫০ গ্রামের ইলিশ ৭০০-৮০০ টাকা কেজি, ৭০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ১ কেজি ৫০০ গ্রাম থেকে পৌনে ২ কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা কেজি। একই অবস্থা অন্যান্য বাজারেও।

রূপসা পাইকারী মৎস্য আড়তের মদিনা ফিশের মালিক মো. আবু মুসা গাজী জানান, বর্তমানে বাজারে জাটকা বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪৫০ টাকা কেজি দরে, ৫০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ ৭০০-৮০০ টাকা, ৬০০-৮০০ গ্রাম ৯৫০ টাকা কেজি, ৮০০ গ্রাম থেকে এক কজি ওজনের ইলিশ ১১০০ থেকে ১১৫০ টাকা, ১২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৪০০-১৪৫০ টাকা কেজি, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ১৬৫০-১৭০০ টাকা, এর ওপরে ২ কেজি পর্যন্ত ১৮০০-২০০০ টাকা কেজি দরে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। 

 আবু মুসা গাজী ঢাকা পোস্টকে বলেন, রূপসা মুকামে যে মাছ আসছে তার অর্ধেকের বেশি ভারতে বিক্রির উদ্দেশ্যে নেওয়া হচ্ছে। বাকি যে মাছ থাকছে তাতে চাহিদা মিটছে না। যে কারণে দামও বেশি।

খালিশপুর সুপার মার্কেটের মাছ বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, আগের তুলনায় মাছের দাম মোটামুটি কম আছে। বিক্রি তেমন একটা নেই। খালিশপুরের অবস্থাতো এমনিতেই ভালো না। মিল কলকারখানা বন্ধ, বেচাকেনা নেই। কাস্টমার কম।

অপর এক বিক্রেতা মো. ইয়াছিন বলেন, আগের চেয়ে মাছের দাম বাড়ছে। নিম্নচাপের কারণে মাছ কম। তাই দাম বেশি। জাটকার দাম একটু কম। তাও চট্টগ্রামেরটা, বরিশালের জাটকার দাম কমেনি।

জাটকা মাছ কিনেছেন হানিফ কমান্ডার। তিনি বলেন, একটু বড় মাছ ১২০০ টাকা, ছোটটা ৪০০ টাকা। মোটামুটি দাম। একেবারে কমও নয়, বেশিও না। আমি ৪০০ টাকা কেজি দরে জাটকা কিনেছি।

খালিশপুরের বাসিন্দা মো. রিপন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইলিশের মৌসুম অনুযায়ী দাম অনেক বেশি। এই সময়ে ইলিশের দাম কম থাকার কথা। কিন্তু বাজারে এসে দেখি দাম অনেক বেশি। যা আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ১ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল। ১ জুলাই থেকে মাছ ধরা শুরু হলেও গত বছরের তুলনায় এবারের উৎপাদন কম। আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, শ্রমের মূল্য বৃদ্ধি, আশানুরূপ মাছ না পাওয়ার কারণে এবার মৌসুমেও ইলিশের দাম বেশি। এছাড়া ভারতে ইলিশ রপ্তানি হওয়ায় চাহিদা বেড়েছে। যেসব ব্যবসায়ীরা ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছেন তারাও দাম দিয়ে মাছ সংগ্রহ করছেন। সবমিলিয়ে ইলিশের দাম কিছুটা চড়া। তবে দাম বাড়ায় জেলেরা কিছুটা উপকৃত হচ্ছে।  

তিনি বলেন, এবার বড় ইলিশ বেশি ধরা পড়ছে। তাই দামও বেশি। 

মোহাম্মদ মিলন/আরএআর