শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ভূমিহীন ও স্বামী পরিত্যক্তা মতিজান বিবি। বনের জমিতে একটি ভাঙা ঝুপড়ি ঘরে তার বসবাস। বৃষ্টি হলে সারা রাত বসে কাটাতে হয়। তবুও তার ভাগ্যে জোটেনি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। তাইতো মতিজান বিবি প্রশ্ন করে বলেন, মরার আগে আমি কি সরকারি ঘর পামু?

ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়ন গান্দিগাও উত্তর পাড়া গ্রামের বাসিন্দা মতিজান বিবি বলেন, ভোটার কার্ডে (জাতীয় পরিচয়পত্র) বর্তমানে আমার বয়স ৬৬ বছর। ১৯৭১ সালে দেশে যুদ্ধের সময়ে বিয়ে হয়েছিল। আমার দুইডে ছেলে ও দুইডে মেয়ে আছে।

তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী আজিজল হক টগর প্রায় ৩০ বছর আগে আমাকে রাইখা আরেকডা (আরেকটা) বিয়ে কইরা চইলা যায়। এরপর আর স্বামীর ভরণপোষণ পাই নাই। ওই সময় চার সন্তানের মুখে খাবার দিতে অনেক কষ্ট করেছি। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাইছি। পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ কইরে বাজারে বেইচা পুলাপানগরে খাওইয়া বড় করেছি। লাকড়ি কুড়িয়ে বাড়িতে আইনে আগুনে পুইড়া কয়লা তৈরি কইরা বাজারে বেচতাম (বিক্রি করতাম)। যা টেহা পাইতাম তা দিয়ে সংসারের খরচ মেটানোর পাশাপাশি অল্প কিছু কিছু জমিয়ে রাখতাম।

স্থানীয় হুরমুজ আলী বলেন, অনেক আগে স্বামী চলে গেছে। কত কষ্ট কইরা ছেলে মেয়েদের বড় করেছে। এখন বৃদ্ধা মায়ের দায়িত্ব নেয় না কোনো সন্তান। এক সময় তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করতে পারলেও এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারেন না।

স্থানীয় গোলাপ হোসেন বলেন, মতিজানের স্বামীর ভিটে-মাটি নাই। সে বিভিন্ন জায়গায় থাকতে। এরপর গত ৫-৬ বছর আগে আমগোর এলাকার লোকজন দরবেশ তলা নামক পাহাড়ি উঁচু টিলায় বন বিভাগের জমির ওপর তার জন্য একটা ছাপড়া ঘর নির্মাণ করে দেয়। বর্তমানে ঘরটির চার পাশে রয়েছে কয়েকটি পুরোনো ঢেউ টিন, আর চালে আছে পলিথিনের ছাউনি। ঘরটিতে খুব কষ্ট করে থাকতাছে বেডিডা (মতিজান)।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ইতোপূর্বে ক এবং খ দুটি তালিকা করা হয়েছে। মতিজান বিবির নাম তালিকায় আছে কি-না যাচাই করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেখানে তার নাম না থাকলে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি ভূমিহীন হলে খোঁজ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
 
এসপি