পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় তৃতীয় দিনের উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৭টার দিকে অভিযান স্থগিত করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। 

তারা জানিয়েছে, আগামীকাল বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা থেকে আবার নদীতে উদ্ধার অভিযান চালাবে। নৌকাডুবির ঘটনার পর থেকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত মোট ৬৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি ও স্থানীয়রা। 

জেলা প্রশাসনের জরুরি তথ্য কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৬৮ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখনও ৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন। 

উদ্ধার অভিযান স্থগিতের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার তুষার কা‌ন্তি রায়। তিনি বলেন, আজকের মতো আমাদের উদ্ধার অভিযান বন্ধ। আগামীকাল (বুধবার) সকাল ৬টা থেকে আবারও উদ্ধার কাজ শুরু হবে। উদ্ধার কাজ স্থগিত থাকলেও আমাদের কয়েকটি টিম ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে।

এর আগে গত রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে কতজন যাত্রী ছিল, তার সঠিক তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। তবে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা প্রশাসনের কাছে রোববার রাতে ৬৬ জনের তালিকা দিয়েছিল। সেই অনুযায়ী এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৪ জন। ইতোমধ্যে মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার দুপুরে মহালয়া দেখতে আউলিয়া ঘাট থেকে নৌকায় বদশ্বেরী ঘাটে যাচ্ছিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রায় শতাধিক মানুষ। নৌকাটি ছাড়ার শুরুতেই দুলতে থাকে। একপর্যায়ে দুলতে দুলতে মাঝপথে গিয়ে নৌকাটি ডুবে যায়।  

মৃতরা হলেন- হাশেম আলী (৭০), শ্যামলী রানী (১৪), লক্ষ্মী রানী (২৫), অমল চন্দ্র (৩৫), শোভা রানী (২৭), দীপঙ্কর (৩), প্রিয়ন্ত (২.৫), রুপালি ওরফে খুকি রানী (৩৫), প্রমিলা রানী (৫৫), ধনবালা (৬০), সুনিতা রানী (৬০), ফাল্গুনী (৪৫), প্রমিলা দেবী, জ্যোতিশ চন্দ্র (৫৫), তারা রানী (২৫), সানেকা রানী (৬০), সফলতা রানী (৪০), বিলাশ চন্দ্র (৪৫), শ্যামলী রানী ওরফে শিমুলি (৩৫), উষশী (৮), তনুশ্রী (৫), শ্রেয়সী, প্রিয়ন্তী (৮), সনেকা রানী (৬০), ব্রজেন্দ্র নাথ (৫৫), ঝর্ণা রানী (৪৫), দীপ বাবু (১০), সূচিত্রা (২২), কবিতা রানী (৫০), বেজ্যে বালা (৫০), দিপশিখা রানী (১০), সুব্রত (২), জগদীশ (৩৫), যতি মিম্রয় (১৫), গেন্দা রানী, কনিকা রানী, সুমিত্রা রানী, আদুরী (৫০), পুষ্পা রানী, প্রতিমা রানী (৫০), সূর্যনাথ বর্মন (১২), হরিকেশর বর্মন (৪৫), নিখিল চন্দ্র (৬০), সুশীল চন্দ্র (৬৫), যুথি রানী (০১), রাজমোহন অধিকারী (৬৫), রুপালী রানী (৩৮), প্রদীপ রায় (৩০), পারুল রানী (৩২), প্রতিমা রানী (৩৯), শৈলবালা, সনেকা (৫৫), হরিকিশোর (৪৫), শিল্টু বর্মন (৩২), মহেন চন্দ্র (৩০), ভূমিকা রায় পূজা (১৫), আঁখি রানী (১৫), সুমি রানী (৩৮), পলাশ চন্দ্র বর্মন (১৭), ধৃতি রানী দাস (১০), সজিব রায় (১০), পুতুল (১৫), কবিতা (১১), যত্না রাণী (৪০), মলিন্দ্র নাথ বর্মণ (৫৬), মনিভূষন বর্মণ (৪৬), মুনিকা (৩৮) ও দোলা রাণী(৫)।

মৃতদের মধ্যে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ৪৫ জন, দেবীগঞ্জের ১৭ জন, আটোয়ারীর ২ জন ও ঠাকুরগাঁওয়ের ৩ জন ও পঞ্চগড় সদরের একজন রয়েছেন। ৬৮ জনের মধ্যে নারী ৩০ জন, পুরুষ ১৭ জন এবং ২১টি শিশু রয়েছে।

এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন দিনে ৬৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমাদের কাছে থাকা তথ্য মতে আরও ৪ জনের মতো লোক নিখোঁজ রয়েছেন। তবে নিখোঁজের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা বলা যাচ্ছে না। নিখোঁজ একজন থাকলেও আমরা উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাব।

এমএএস