গোপালগঞ্জে একটি মামলায় বাদী ও আসামিপক্ষের যোগসাজশে ভুয়া সাক্ষী সেজে সাক্ষ্য দিতে এসে মাজিস্ট্রেটের কাছে ধরা পড়েছেন শহিদুল শেখ (৪২) নামে এক ব্যক্তি। এসময় মামলার বাদী মো. তারা মিয়া কোর্ট এজলাস থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। পরে ভুয়া সাক্ষীসহ আসামিপক্ষের ১১ জনকে কারাগারে পাঠান আদালত।

মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) গোপালগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে। ওই ভুয়া সাক্ষী শহীদুল শেখ মুকসুদপুর উপজেলার ডাঙ্গাদুর্গাপুর গ্রামের সফিউদ্দিন শেখের ছেলে ও বাদী তারা মিয়ার আপন ভাতিজা।

এ ঘটনায় সিজেএম আদালতের পেশকার মো. জামিল আহমেদ বাদী হয়ে ভুয়া সাক্ষীসহ বাদী ও আসামিপক্ষের ১২ জনকে আসামি করে গোপালগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।

জানা যায়, ২০২০ সালে মুকসুদপুর উপজেলা ডাঙ্গাদুর্গাপুর গ্রামে জমিজায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে বাদীর ভাতিজা সাইফুল শেখকে মারপিট ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে প্রতিপক্ষের লোকজন। ওই দিনই চাচা তারা শেখ বাদী হয়ে মুকসুদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং জি আর-১৮/২০২০)।
কয়েকদিন আগে স্থানীয়ভাবে দুপক্ষের মধ্যে মীমাংসা হয়ে গেলে বাদীপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় মামলাটি তুলে নেওয়ার।

এদিকে ২০২১ সালে পুলিশ ১১ জনকে আসামি করে আদলতে চার্জশিট দিলে মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। মঙ্গলবার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ওই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। মামলার মূল সাক্ষী সাইফুল শেখ না থাকায় বাদী ও আসামিপক্ষের যোগসাজশে তার ছোট ভাই শহিদুল ইসলাম সাক্ষ্য দিতে আদালতের কাঠগড়ায় উঠেন।

সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের সময় বিচারক সাক্ষীর নাম জিজ্ঞাসা করলে প্রথমে তিনি নিজের নাম শহিদুল শেখ বলে ফেলেন। দ্বিতীয়বার আবার তার নাম সাইফুল শেখ বললে বিচারকের সন্দেহ হয়। পরে সাক্ষীর আইডি কার্ড দাখিলের নির্দেশ প্রদান করলে সাক্ষী নিজে থেকেই জানান তিনি সাইফুল শেখ নন। তিনি শহীদুল শেখ। তিনি আদালতে সত্য তথ্য তুলে ধরেন। এসময় শহীদুল শেখের চাচা বাদী তারা মিয়া আদালত থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে ম্যাজিস্ট্রেট ওই ভুয়া সাক্ষী ও সব আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এমএ হাইও জানান, মামলায় এজাহারকারী মো. তারা শেখ ও আসামি পরস্পরের যোগসাজশে আদালতে ভুয়া নাম ব্যবহার করে শহীদুল শেখকে ভুয়া সাক্ষী বানিয়ে আদালতে প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করায় তারা বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৯৩/১৯৬/২০৫/৪১৯/১০৯ ধারায় অপরাধ করেছেন।

সিজেএম কোর্টের পেশকার জামিল আহমেদ বলেন, মুকসুদপুর জিআর ১৮/২০২০ মামলা সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল মঙ্গলবার। সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ওই ভুয়া সাক্ষী শহিদুল শেখ আদালতে উঠেন। বিচারক তার নাম জানতে চাইলে তিনি নিজের নাম বলে ফেলেন। পরে ভুয়া সাক্ষী সেজে আদালতের সঙ্গে প্রতারণার দায়ের আদালতের বিচারক ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাহাদাত হোসেন ভুইয়া ভুয়া সাক্ষী, বাদী ও আসামিসহ ১২ জনকে জেল হাজতে পাঠাতে এবং ওই ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি পৃথক মামলা করার নির্দেশ দেন।

আশিক জামান/এসএসএইচ