শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে নানা ভাবনায় মত্ত ছিল অর্পিতা (১৭)। নতুন কাপড় আর সবচেয়ে মণ্ডপ ঘোরার স্বপ্নে বিভোর ছিল। সে স্বপ্নের শুরুটা হয়েছিল মহালয়া দিয়ে। সকাল থেকে সেজেগুজে দুপুরে মা, তিন বোন, চাচি ও দুই ভাগ্নিসহ যায় আউলিয়া ঘাটে। কিছুদূর যাওয়ার পর ডুবে যায় নৌকাটি। এ ঘটনায় অর্পিতা ও তার বড় বোন আলো রানী ফিরলেও হারাতে হয়েছে পাঁচ স্বজনকে। 

পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আরাজি শিকারপুর গ্রামের হেমন্ত রায়ের মেয়ে অর্পিতা (১৭)। অর্পিতা কালিয়াগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। বোনসহ বেঁচে ফিরলেও লাশ হয়েছে পরিবারের চার সদস্য। এখনো একজন নিখোঁজ রয়েছে। 

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে মহালয়া দেখতে  আউলিয়া ঘাট থেকে বদেশ্বরী ঘাটে যায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এক ঘাট থেকে আরেক ঘাটে যাওয়ার জন্য নৌকা ব্যবহার করেন তারা। তবে নৌকার ধারণক্ষমতা ছিল ৪০-৫০ জন যাত্রী। কিন্তু নৌকায় যাত্রী ছিল ১০০ জনেরও বেশি। এখন পর্যন্ত ৬৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

বুধবার সকালে অর্পিতাদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তাদের শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান চলছে। বাড়িজুড়ে বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না অর্পিতার আহাজারি। অপরদিকে স্ত্রী-সন্তান হারিয়ে দিশেহারা হেমন্ত রায়। 

হেমন্ত রায় বলেন, মহালয়া দিয়ে আমাদের শুরু হয় শারদীয় দুর্গোৎসব। এই শুরুটা যে এবার সারা জীবনের জন্য শেষ  হয়ে যাবে কখনো ভাবিনি। আজ আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমার সব শেষ হয়ে গেল। মহালয়া দেখতে আমার স্ত্রী কবিতা রানী (৪০), বড়  মেয়ে আলো রানী, মেজ মেয়ে অর্পিতা, ছোট মেয়ে শ্যামলী রানী (১১), ছোট ভাই বাসুদেবের স্ত্রী রুপালী (৩০), তার মেয়ে নন্দিনী (৮), নাতনি জয়া (৪) ও জ্যোতি রানী (১.৫) যায়। নদী পার হতে গিয়ে সব শেষ হয়ে গেল। এতে আমার দুই মেয়ে ও এক ভাতিজি বেঁচে ফিরলেও লাশ হয়ে ফিরেছে চারজন। এখনো নিখোঁজ রয়েছে নাতনি জয়া রানী। এমন শোক আর কারও পরিবারে না আসুক।

অর্পিতার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও আহাজারি আর আর্তনাদ ছাড়া কিছুই বলতে পারেনি সে।

পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভয়াবহ এক নৌকাডুবিতে অনেক মানুষ হারাতে হলো। আমরা এখন পর্যন্ত ৬৮ জনের লাশ উদ্ধার করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। যেহেতু নৌকায় যাত্রীর সংখ্যা নিশ্চিত না তাই আজও আমাদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে। আর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান ও চিকিৎসা খরচের ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।

এসপি