শিশু আজিজুল ইসলাম আফাতের বয়স মাত্র ১৪ বছর। এ বয়সটি স্কুলে সহপাঠীদের সঙ্গে হৈ-হুল্লুড় করার। কিন্তু আফাতের ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টোটা। এ বয়সেই তার কাঁধে এখন সংসারের পুরো দায়িত্ব। সেই সঙ্গে ক্যান্সার আক্রান্ত বাবার চিকিৎসা চালানো।

আর তাই বাবার ভ্যানটি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে প্রতিবন্ধী শিশু আফাত। এতে দিনে ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয় তার। সেই টাকায় চলছে সংসার এবং বাবার চিকিৎসা।

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ৪নং চাঁদশী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সরদার বাড়িতে ঢুকতেই ডান পাশে ঝুঁপড়ি ঘরটি আফাতদের। তিন ভাই-বোনের মধ্যে বড় বোন ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করে। ছোট ভাই জিহাদের বয়স ৬ বছর।

৮ মাস আগেও আফাতের বাবা হালিম সরকার কথা বলতে পারতো। কিন্তু গলায় ক্যান্সার ধরা পরার পর এখন কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে তার। অপারেশনের মাধ্যমে গলায় নল বসিয়ে দেওয়ায় সেখান দিয়েই শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন তিনি। 

হালিম সরদারের স্ত্রী আসমা বেগম বলেন, আমার সংসারে আয় করার মতো আর কেউ নেই। এজন্য আফাত এখন বাবার ভ্যান চালিয়ে যা আয় করছে সেই টাকায় সংসার চলে আমাদের। ছেলেটাও আমার প্রতিবন্ধী। ওর নামে প্রতিবন্ধী ভাতা আসতো, কিন্তু কয়েকমাস ধরে আর পাই না। শুনেছি কে যেন আমাদের টাকা তুলে নিয়ে যায়। তাছাড়া ভ্যানের ব্যাটারি দুটিও নষ্ট হয়ে গেছে। দিনে দুই/তিন বার চার্জ দিতে হয়। এতে ঠিকভাবে ট্রিপ দিতে যেতে পারে না আফাত।

তিনি বলেন, ডাক্তার বলেছিল আমার স্বামীকে চারটি ক্যামো দিতে হবে। কিন্তু আমাদেরতো ক্যামো দেওয়ার মোত টাকা নেই। এখন ওষুধ কেনাও বন্ধ রয়েছে। এজন্য বাড়িতে বসেই শেষ জীবন পার করছে আমার স্বামী। আরেকবার ডাক্তারের কাছে নিয়েছিলাম। তারা খুব রাগারাগি করলো ক্যামো কেন দিচ্ছি না, এজন্য। তারা বলেছে দ্রুত ক্যামো না দিলে যেকোনো সময় মারা যাবে। আমি ডাক্তারের পা ধরে বলেছি, ক্যামো দেওয়ার জন্য সব মিলে ৪০/৪২ হাজার টাকা আমাদের নেই। আমরাতো তিনবেলা ঠিকমতো খেতেই পারি না। 

আসমা বলেন, সমাজসেবা অধিদফতরে ক্যান্সার চিকিৎসার সাহায্যের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কোনো সহায়তা পাইনি। কেউ খবরও নেয়নি।  

হালিম সরদারের ভ্যানচালক শিশু ছেলে আফাত বলে, আমার বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত। কিন্তু তার চিকিৎসা চলছে না। আমি ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাই। দিনে ৩০০-৪০০ টাকা আয় করতে পারি। কিন্তু এই টাকায় সংসারও চলে না, আমার আব্বার চিকিৎসাও চলছে না।

প্রতিবেশী সেকান্দার সরদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, হালিম সরদারের পরিবারটি খুবই অসহায়। তিনি নিজে ক্যান্সার আক্রান্ত। প্রতিবন্ধী ১৪ বছরের ছেলেটি এখন ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছে। 

এ বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার বিএম আব্দুল মান্নানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রনি সিকদার বলেন, হালিম সদদারের ছেলে প্রতিবন্ধী ভাতা পেত। সেটি এখন বন্ধ আছে কিনা জানি না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব। যদি বন্ধ থাকে তাহলে চালুর ব্যবস্থা করব।

তিনি বলেন, মেম্বার হিসেবে যতটুকু পারি সাহায্য করেছি। কিন্তু সেই টাকায় ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্ভব না। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে হয়তো তার চিকিৎসা হতো।

এ বিষয়ে চাঁদশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, হালিম সরদার ক্যান্সার আক্রান্ত আমি জানি। এজন্য পরিষদের যতটুকু সামর্থ সেই অনুসারে চেষ্টা করি সহায়তা করার। পরিবারটি সত্যিকার অর্থেই দরিদ্র। তার ছেলে প্রতিবন্ধী ভাতা আগে থেকেই পেত। কিন্তু এখন বন্ধ আছে কিনা তা জানি না।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএএস