কুমিল্লায় ৫ দিনব্যাপী উদ্যোক্তা মেলা জমে উঠেছে। ভিক্টোরিয়া ই কমার্স নামক ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে আবিষ্কৃত উদ্যোক্তাদের এ মেলা শুরু হয়েছে ২৬ সেপ্টেম্বর। বৃহস্পতিবার মেলার চতুর্থ দিনে মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

এদিন বিকেলে কুমিল্লার টাউনহল মাঠে চলা মেলায় গিয়ে দেখা যায় মোট ৫৬টি স্টল রয়েছে। স্টলগুলোতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে নিজেদের তৈরি করা বিভিন্ন গৃহসজ্জা আসবাব, সুস্বাদু পিঠা, কেক, আচার, বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা কসমেটিকস, জামা, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্যের সমাহার নিয়ে বসেছে স্টলগুলোতে। 

উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে স্বাবলম্বী করার স্বপ্নে অনলাইন প্লাটফর্মে বসে সময় নষ্ট না করে আয় করে নিজের খরচের যোগান দিচ্ছেন তারা।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষক কাজী আপন তিবরানির উদ্যোগে গঠন করা হয় ভিক্টোরিয়া ই কমার্স নামক একটি অনলাইন প্লাটফর্ম। দফায় দফায় মিটিং করে শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য মোটিভেশনাল ট্রেনিং করা হয়। ভিক্টোরিয়া ই কমার্স নামক একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে সেখানে কুমিল্লা ও এর আশপাশের জেলাগুলোর উদ্যোক্তারা যুক্ত হন সেই গ্রুপে। 

গ্রুপের বর্তমান সদস্য ১ লাখ ৬৯ হাজার। এসব সদস্যের মধ্যে বেশিরভাগই উদ্যোক্তা হয়ে বিভিন্ন পণ্যসেবা দিচ্ছেন অনলাইন এবং নিজস্ব শো-রুম থেকে। কারও কোনো সহযোগিতা লাগলে গ্রুপের মাধ্যমেই সমাধান করে নেন পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে স্বাবলম্বী করতে চাওয়া সেসব তরুণেরা।

তেমনি একজন উদ্যোক্তা জাহিদ হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিনি একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে স্বাবলম্বী করতে ভিক্টোরিয়া ই কমার্সের মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করেন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে। জ্যাজক্যাট নামক ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ভারত এবং মিয়ানমার থেকে প্রাকৃতিক মুক্তাদানা আমদানি করে সেগুলো দিয়ে মালা বানিয়ে বিক্রি করছেন তিনি। উদ্যোক্তা মেলায় স্টল নিয়ে সেসব মুক্তার মালা বিক্রি করছেন তিনি। পাশাপাশি ভারত, সিঙ্গাপুর এবং মায়ানমার থেকে বিভিন্ন রকমের চকলেট আমদানি করে বিক্রি করছেন অনলাইনে। মেলার চতুর্থদিনে এসে ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

নাজমুল হেসেন নামের একজন উদ্যোক্তা তার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত আচার বিক্রি করছেন মেলায়। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৩৫ রকমের আচার আছে তার স্টলে। আম, আমড়া, রসুন, চেরিফল, চালতা দিয়ে বিভিন্ন স্বাদের আচারের পাশাপাশি কচুর আচার, আলুর আচার, লাউয়ের আচার, গাজরের আচার মরিচের আচারসহ ব্যতিক্রমী আচার বিক্রি করে সাড়া পাচ্ছেন ক্রেতাদের। কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার খেতাসার এলাকার এই উদ্যোক্তা পড়াশোনার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। 

মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী এবং ক্রেতারা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভিক্টোরিয়া ই কমার্স যে উদ্যোগটি গ্রহণ করেছে নিঃসন্দেহে তা প্রশংসার দাবিদার। মেলায় যারা স্টল নিয়েছেন তাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। তারা পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু একটা করে নিজেদের খরচ নিজেরাই বহন করছে। তাদের দেখে অনুপ্রেরণা আসে মনে। বেকার বসে চাকরি না খুঁজে নিজেই উদ্যোক্তা হওয়াটা অনেক সন্মানের। 

ভিক্টোরিয়া ই কমার্সের কর্ণধার এবং উদ্যোক্তা মেলার আয়োজক কাজী আপন তিবরানি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি গত ২ বছর ধরে ভার্চুয়ালি চেষ্টা করেছি উদ্যোক্তা তৈরি করতে। বিভিন্ন সময়ে তাদের বিভিন্ন মোটিভেশনাল ট্রেনিং করিয়েছি। আমি চেয়েছি চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরাই স্বাবলম্বী হোক। চাকরি ছাড়াও সফলতার বিভিন্ন পথ আছে, সেটা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয় আমার চেষ্টা সফল হয়েছে। প্রচুর উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। সেই সব উদ্যোক্তাদের নিয়ে এবারই প্রথম মেলার আয়োজন করেছি। মেলায় যে পরিমাণ সাড়া পেয়েছি তাতে মনে হচ্ছে আয়োজনটা সফল হয়েছে। ভবিষ্যতেও উদ্যোক্তাদের নিয়ে বিভিন্ন আয়োজন করা হবে।

আরিফ আজগর/এমএএস