ঢাকা থেকে পটুয়াখালী চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ সুন্দরবন-৯ থেকে মো. রাহাত আহমেদ নামে এক যাত্রীর নগদ টাকা, মোবাইল ও মোটরসাইকেলের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র চুরি হয়েছে। এছাড়াও গত তিন মাস অন্য এক যাত্রীর ঢাকা থেকে আসার পথে একই লঞ্চে কেবিনের জানালার তালা ভেঙে চুরির অভিযোগ রয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে লঞ্চের ৩৪৬ নম্বর কেবিনে। আরেকটি, গত ২৮ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকার সদরঘাট থেকে পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসার আগে সুন্দরবন-৯ লঞ্চের ২১৯নং কেবিনে চুরির ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, যাত্রীবাহী লঞ্চ সুন্দরবন-৯ ঢাকা থেকে উঠেন বেসরকারি কোম্পানি ইউনিলিভারের হেড  অ্যাডভার্টাইজিং অফিসার মো. রাহাত ও তার স্ত্রী মহাসীনা আকতার। রাতের খাবার শেষে কেবিনের দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন তারা। বগা ঘাটে আসার পরে মো. রাহাত আহমেদ ঘুম ভেঙে গেলে নিজের মুঠোফোন খুঁজতে গিয়ে দেখেন তাদের দুজনের মোবাইল কেবিনে নেই। লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে, তাদের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দেখতে পান দুটি ছেলে কেবিনের জানালা দিয়ে দরজা খুলে তাদের দুজনের মোবাইল, নগদ টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে চলে যাচ্ছে। পটুয়াখালী ঘাটের আগে বগা ঘাটে সন্দেহভাজন এই দুইজন লঞ্চ থেকে নেমেছে।

রাহাত আহমেদ বলেন, লঞ্চের কেবিনে আসার পরে আমরা দেখতে পাই কেবিনের সামনে দুটি ছেলে ঘোরাফেরা করছে। আর এই দুটি ছেলেই আমাদের কেবিনের জানালা দিয়ে দরজা খুলে দুটি মোবাইল নগদ ১২৮০০ টাকা ও মোটরসাইকেল এর কাগজ নিয়ে যায়। লঞ্চের কেবিনে গরম বেশি থাকায় জানালাটি খুলে রাখা হয়েছিল এজন্য তারা সুযোগটা পেয়েছে। বগা ঘাটে ফেরার পরে আমি আমার মোবাইল খোঁজ করলে দেখি কেবিনে মোবাইল ও টাকা নেই সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেন।
 
তিনি বলেন, লঞ্চ কর্তৃপক্ষ আমাকে জানান আমি তাদেরকে জানাতে দেরি করে ফেলেছি। ইতোমধ্যে চোর বগা ঘাটে থেকে নেমে গেছেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরেও আমরা লঞ্চে আসা-যাওয়া করছি এভাবে যদি যাত্রীদের হয়রানি হয় তাহলে সামনে আরও খারাপ হবে।

পটুয়াখালী শহরের কাঠপট্টি এলাকার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের সহ-সভাপতি মো. আবু নাইম জানান, গত ২৮ জুন তার স্ত্রী ইসমত আরা ঢাকার সদরঘাট থেকে পটুয়াখালী আসার পথে সুন্দরবন-৯ লঞ্চের কেবিনে প্রবেশ করে মালামাল রাখেন। পরে কেবিনটি তালা মেরে লঞ্চের দোতলার সামনের অংশে গেলে ২০ মিনিট পর এসে দেখেন কেবিনের ভেতরে তার হাত ব্যাগ নেই।

পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় দুটি ছেলে কেবিনের তালা ভেঙে ব্যাগ নিয়ে গেছে। ঘটনাটি ঢাকা সদরঘাট ঘটার কারণে মামলা করলে ঢাকায় করতে হবে এজন্য আমরা মামলা করিনি।

সুন্দরবন-৯ লঞ্চের কেবিন বয় মো. মাসুম জানান, এখানে যে ঘটনা ঘটেছে আসলে আমি শুনেছি সকাল বেলা। ঘুম থেকে উঠে জানতে পারি যে কেবিনের মোবাইল ও নগদ টাকা চুরি হয়েছে। যারা চুরি করেছে তাদেরকে আমরা চিনি না। এর আগে তাদেরকে কখনো দেখি নাই। লঞ্চে তো অনেক যাত্রী আসে আর আমাদের জানানো হয়েছে অনেক পরে। একটি ঘাট ছাড়ার পরে। এর আগের ঘটনা জানতে চাইলে তিনি জানান, তখন তিনি ছুটিতে ছিলেন।

সুন্দরবন-৯ লঞ্চের সুপারভাইজার মেহেদি হাসান সুমন ঢাকা পোস্টকে বলেন, চুরি হওয়ার পরে আমাদেরকে জানিয়েছে। চোরের ছবি আমাদের কাছে রাখা আছে। চোরের ছবি দেখে আমরা তদন্ত করবো।

গত তিন মাস আগের ঘটনা জানতে চাইলে তিনি জানান, এই কাজগুলো আমরা করি না। এগুলো বাইরের লোকেরা করে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আপনারা দেখতে পারবেন। যারা এই চুরি কাজ করছে তাদের ধরা প্রয়োজন। তাদের ধরতে পারলে এর সঠিক বিচার করা যেত।
 
এ বিষয়ে সুন্দরবন লঞ্চ কোম্পানির মালিক সাইদুর রহমান রিন্টু মিয়ার ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

মাহমুদ হাসান রায়হান/এমএএস