পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় পঞ্চম দিনেও নিখোঁজ তিনজনের সন্ধান না পাওয়ায় উদ্ধার অভিযান গড়িয়েছে ষষ্ঠ দিনে। শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা থেকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা অভিযান শুরু করেছেন। 

এদিকে সংস্থাটি জানিয়েছে, নিখোঁজ তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তবে উদ্ধার কাজ চলবে আরও দুই দিন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বেলা সাড়ে ১১টা) নৌকাডুবিতে নিখোঁজ কাউকে উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়নি। নৌকাডুবির ঘটনায় সর্বশেষ বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল পর্যন্ত ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার তুষার কা‌ন্তি রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিখোঁজ তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। আমাদের ধারণা, বাকি নিখোঁজদের মরদেহ হয়তো নদীতে ভেসে গেছে অথবা বালির নিচে চাপা পড়তে পারে। যেমনটা গত বুধবার আমরা বালিতে চাপা পড়া একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। তারা আমাদের আরও দুই দিন উদ্ধার কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন।

তিনি বলেন, সকাল ৬টায় আউলিয়ার ঘাট এলাকা থেকে তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে প্রায় ৭০ জন উদ্ধারকর্মী ও রংপুর, রাজশাহী ও কুড়িগ্রামের ডুবুরি দল নদীর ভাটি অংশে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছেন। এছাড়া দেবীগঞ্জ, খানাসামা ও বীরগঞ্জের ইউনিট কাজ করছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়।

জেলা প্রশাসনের জরুরি তথ্যকেন্দ্রের মতে, ৬৯ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে ঠিক কতজন যাত্রী ছিল, তার সঠিক তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে এখনো তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।

নিখোঁজ তিনজন হলেন- দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ছত্রশিকারপুর হাতিডুবা গ্রামের মদন চন্দ্রের ছেলে ভুপেন ওরফে পানিয়া, বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের খগেন্দ্রনাথের ছেলে সুরেন এবং পঞ্চগড় সদর উপজেলার ঘাটিয়ারপাড়া গ্রামের ধীরেন্দ্রনাথের মেয়ে জয়া রানী।

গত রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিন ২৫ জন, দ্বিতীয় দিন ২৬ জন, তৃতীয় দিন ১৭ ও চতুর্থ দিন একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর অপর পাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজা উপলক্ষে ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নৌকাযোগে নদী পার হচ্ছিলেন। তবে ৫০ থেকে ৬০ জনের ধারণক্ষমতার নৌকাটিতে শতাধিক যাত্রী ছিলেন। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নদীর মাঝপথে নৌকাটি ডুবে যায়। কয়েকজন সাঁতরে তীরে আসতে পারলেও অধিকাংশই পানিতে ডুবে যায়।

মৃত ৬৯ জনের মধ্যে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ৪৫ জন, দেবীগঞ্জের ১৮ জন, আটোয়ারীর ২ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের ৩ জন ও পঞ্চগড় সদরের একজন রয়েছেন। মৃত ৬৯ জনের মধ্যে নারী ৩০ জন এবং পুরুষ ১৮ জন। বাকি ২১ জন শিশু।

শরিফুল ইসলাম/এসপি