মারুফ হোসেন ও জনি হোসেন

তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর সদস্য মারুফ হোসেন ও জনি হোসেন। সোমবার (১ মার্চ), ক্যালেন্ডারের পাতায় দিনটি আর সব দিনের মতো হলেও তাদের কাছে এক অন্য রকম দিন। কারণ, রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে কর্মময় প্রথম দিন কাটালেন তারা। এ যেন দিনবদলের শুরু।

জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল তার দেওয়া কথা রেখেছেন। মারুফ হোসেন ও জনি হোসেনকে চাকরি দিয়েছেন নিজ দপ্তরে। মারুফ কম্পিউটার অপারেটর পদে ও জনি অফিস সহায়ক পদে যোগদান করেছেন সোমবার সকালে। দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে (মাস্টাররোল) এই নিয়োগ পেয়েছেন তারা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত শাখায় তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

মারুফ হোসেন নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে। ২০১৯ সালে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রো মেডিকেলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন তিনি। অন্যদিকে জনি হোসেন নগরীর কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার মুনতাজ শাহের ছেলে। তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাওয়ায় তিনি ও তার পরিবারও খুশি।

এর আগে গত শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দিনের আলো হিজড়া সংঘ আয়োজিত এক সভায় নিজ দপ্তরে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর দুজনকে চাকরির ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল।

ওই সময় ১ মার্চ থেকে তাদের যোগদানের কথাও জানান জেলা প্রশাসক। এ ছাড়া সরকারিভাবে স্থায়ী নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত নিজ কার্যালয় থেকে তাদের মাসিক সম্মানীর প্রতিশ্রুতি দেন। পরে যোগ্য এই দুজনের নাম জেলা প্রশাসকের দপ্তরে দেয় আলো হিজড়া সংঘ। তারই ভিত্তিতে তাদের নিয়োগ চূড়ান্ত করে জেলা প্রশাসন।

এ কাজ পেয়ে আমি খুবই উচ্ছ্বসিত। আমার কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। তবে আমি আজ থেকে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করব।

জনি হোসেন

চাকরির প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মারুফ বলেন, যোগদানের পর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ কম্পিউটারে বাংলা টাইপিং অনুশীলন করেছি। আমরা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অফিসের বিভিন্ন দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছি।

এর আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন মারুফ। সেখানে কাজ করতে গিয়ে তার তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। মারুফ বলেন, আমার মেয়েলি আচরণের কারণে বাকিরা হাসাহাসি করত। এতে কাজের পরিবেশ নষ্ট হতো। তাই ইস্যু তৈরি করে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়। করোনাকালে কাজ না থাকায় বাড়িতে বসেই ছিলাম।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর চাকরি একটি মাইলফলক উল্লেখ করেছেন দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি মোহনা মঈন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর দুজন সদস্য সরকারি চাকরি পাওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত। এভাবে সরকারি বিভিন্ন দফতরে আমাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দিলে আমাদের অবস্থার উন্নতি হবে। আমাদের জনগোষ্ঠীর মানুষ আদি পেশা (টাকা তোলা) থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজশাহীতে প্রকৃত তৃতীয় লিঙ্গ শনাক্ত করে পর্যায়ক্রমে যোগ্যতানুসারে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এই কার্যক্রমের সূচনা হলো। তাদের ধীরে ধীরে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে এর বিকল্প নেই। পরিবার ও সমাজচ্যুত করে তাদের কোনোভাবেই উচ্ছৃঙ্খল জীবনের দিকে ঠেলে দেওয়া যাবে না।

এনএ