ময়মনসিংহে পূজার ফ্রি হাট
বেদনার জীবনে উৎসবের রঙ
শারদীয় দুর্গাপূজা মানেই বর্ণিল উৎসব। ঢাক-ঢোল, কাঁসর, ঘণ্টা আর নতুন পোশাকের আনন্দ-উচ্ছ্বাস। কিন্তু বৈশ্বিক সংকটে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে উৎসবে ভাটার টান পড়েছে অসচ্ছল ও নিম্ন আয়ের মানুষের। এমন বাস্তবতায় পূজার উৎসবকে রাঙিয়ে দিতে অসহায়-দরিদ্রদের পাশে দাঁড়িয়েছে মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
শনিবার (০১ অক্টোবর) ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের আঠারোবাড়ি এলাকায় পুজোর সব অনুসঙ্গ নিয়ে বসে ভিন্নধর্মী বাজার ‘পূজোর ফ্রি হাট’। দুপুরে এ হাটের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার (সিলেট) নিরাজ কুমার জয়সওয়াল।
বিজ্ঞাপন
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মেদ ভূঞা, গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাছিনুর রহমান প্রমুখ।
হাটে গিয়ে দেখা যায়, শাড়ি, লুঙ্গি, শিশুদের পোশাক, সয়াবিন তেল, নারিকেল, সুগন্দি চাল, সিঁদুর, আলতা, সাবান, চুড়িসহ পুজোর সব পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। আছে লাড্ডু আর বাচ্চাদের আনন্দ দেওয়ার উপকরণও। ক্রেতারা আসছেন, যার যার পছন্দ আর চাহিদা মতো পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন। এই ফ্রি হাট থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য পেয়ে দারুন খুশি অসচ্ছল মানুষেরা।
বিজ্ঞাপন
মালতী রাণী নামে এক নারী বলেন, পূজায় এতকিছু কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই। কিন্তু ফ্রিতে সব কিছুই পেয়ে যাব তা ভাবতেই পারিনি। কোনো পূজাতেই আমরা নতুন জামা-কাপড় পরতে পারি না। এবার সেটা পারব। আমরা অনেক খুশি।
অসহায় মানুষের উৎসবকে রাঙিয়ে দিতেই এই আয়োজন বলে জানান ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা।
আশামণি সরকার ভাবনা নামে এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, উৎসবের রঙ সবার মাঝেই ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি আমরা। সেজন্য ঈদ-পূজা, বড়দিন ছাড়াও যে কোনো উৎসবে এমন আয়োজনের মাধ্যমে আমরা সমাজের দরিদ্র-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। এ কাজে আমাদের সহযোগিতা করেন সমাজের বিত্তবানরাই। আমরা চাই প্রতিটি এলাকায় যেন এটি ছড়িয়ে পড়ে। তাহলেই আমাদের প্রচেষ্টা সার্থক হবে।
ভারতের সহকারী হাইকমিশনার (সিলেট) নিরাজ কুমার জয়সওয়াল বলেন, দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মের একটি বড় উৎসব। সমাজের অসহায় মানুষের মাঝে এই উৎসবকে রাঙিয়ে দিতে যে আয়োজনটি করা হয়েছে এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। এর মাধ্যমে তরুণরা অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে বলে আমি মনে করি।
পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, এই হাটের মাধ্যমে যারা জামা-কাপড়সহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পেল তারা সবাই খেটে খাওয়া মানুষ। এই মানুষগুলোকে কিছু দিতে পারাটাই পূজার মূল থিম। ঈদ-পূজায় ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগটি সব জায়গায় অনুসরণ করা উচিত।
এদিন এই ফ্রি হাট থেকে বিনামূল্যে জামা-কাপড়, চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ও পুজোর সামগ্রী সংগ্রহ করে অসহায় ৩০০ পরিবার।
উবায়দুল হক/আরএআর